মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) বেড়িবাঁধের শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাউবো’র তদারকি ছাড়া ঠিকাদারের লোকজন শিডিউল বহির্ভূতভ দায়সারাভাবে ব্লক বসানোর কাজ করায় বর্তমানে ধ্বেবে যাচ্ছে ব্লক। এহেন অবস্থায় কাজের স্থায়ীত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল।
অন্যদিকে মগনামায় বেড়িবাঁধের কজের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় কেউ কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এ কারণে ঠিকাদারের লোকজন দায়সারাভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আর নজিরবিহীন অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে বেড়িবাঁধের ব্লক বসানোর কাজ করলেও পাউবোর ‘রহস্যজনক; নিরবতায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানান, বিগত ২০১৬ইংরেজী দিকে মগনামা ইউনিয়নের ‘দক্ষিণ মগনামা কাকপাড়া থেকে মগনামা শরৎঘোনা’ পর্যন্ত বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটসহ ব্লক বসানোর জন্য পাউবোর কাছ থেকে কার্যাদেশ পান কক্সবাজারের উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের মালিক বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিকুর রহমান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন পেকুয়া উপজেলার ‘দক্ষিণ মগনামা কাকপাড়া থেকে শরৎঘোনা’ পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজেও ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। বেড়িবাঁধের অতি সন্নিনিকট থেকে মাটি কেটে গর্ত সৃষ্টি করে বেড়িবাঁধ ভরাট করেছেন। পাউবোর শিডিউল অনুযায়ী মাটি ভরাট করেনি। পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকাদারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কাজের শুরু থেকেই বর্তমান পর্যন্ত ‘নিরব দর্শক’র ভূমিকায় রয়েছে! এছাড়াও নিম্নমানের পাথর ও বালি দিয়ে বেশিরভাগ ব্লক তৈরী করা হয়েছে। সিলেটি পাথর ও বালির পরিবর্তে ব্লক তৈরীতে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে পার্বত্য বান্দরবানের লামা-আলীকদমের নিম্নমানের বালি ও পাথর! পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকতা-কর্মচারীদের কাজ তদারকীতে অবহেলা ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অবহেলা, অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে গত চার বছরেও মগনামায় বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হয়নি।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৭ ইংরেজী দিকে মগনামায় পাউবোর বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে এ প্রতিবেদক বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তথ্য নির্ভর ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করলেও পাউবো’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে অনিয়মের মাধ্যমেই তারা গত চার বছর মগনামায় বেড়িবাঁদেও কাজ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলার ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। কাজ বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয় ১’শ ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে ওই ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হয়েছৈ অত্যন্ত দায়সারাভাবে!
গত কয়েক দিন পূর্বে এ প্রতিবেদক মগনামা ইউনিয়নের লঞ্চঘাটের উত্তর দিকে গিয়ে সরেজমিন দেখতে পান, উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের উপস্থিতিতে রাতের আঁধারে প্রায় ৪টি স্ক্রেভেটার গাড়ি দিয়ে বেশ তড়িগড়ি করেই বেড়িবাঁধের ব্লক বসানের কাজ করা হচ্ছে। এসময় পাউবোর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। রাতের আঁধারে ব্লক বসানোর কারণ জানতে এ প্রতিবেদক মুঠোফোনে ঘটনাস্থল থেকে যোগাযোগ করেন কাজ তদরকীর দায়িদ্বপ্রাপ্ত পাউবোর শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো: গিয়াস উদ্দিনের সাথে। এসময় এ কর্মকর্তা বলেন, রাতের আঁধারে ব্লক বসানোর কোন নিয়ম নাই। তিনি ঠিকাদারের লোকজনকে ফোন করে রাতের আঁধারে ব্লক বসানোর কাজে বন্ধ করতে বলবেন জানিয়ে মুঠোফোন কেটে দেন।
সরেজিমনে গিয়ে আরো দেখা গেছে, মগনামা লঞ্চঘাটে উত্তর পাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত বছর ব্লক বসানোর কাজ শেষ করেছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্টান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ব্লক ধ্বেবে যাওয়ার চিত্র ধরা পড়ে প্রতিবেদকের ক্যামেরায়। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী করা ব্লক ভেঙ্গেও যাচ্ছে। শিডিউল মোতাবেক মাটি ভরাট না করাই ব্লক সরে যাচ্ছে। এভাবে মগনামা কাক পাড়া অংশেও ব্লক বসানোর কাজে অনিয়ম করা হয়েছে। রাজাখালী ইউনিয়নে মাটি ভরাট ও ব্লক বসানের কাজে সীমাহীন অনিয়ম-দূর্নীতি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পেকুয়া উপজেলায় পাউবোর কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশনে ম্যানেজ হয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন। আর যে ব্লকগুলো বসানো হয়েছে বা বসানোর প্রস্তুতি চলছে, তার অধিকাংশ ব্লকই শিডিউল মতে তৈরী করা হয়নি।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান আলহাজ¦ শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম বলেন, মগনামায় বেড়িবাঁধের কাজে ঠিকাদার অনিয়ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না কর্তৃপক্ষ।
পাউবোর শাখা কর্মকর্তা (এসও) গিয়াস উদ্দিন ব্লক তৈরীতে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি বলে দাবী করে জানান, শিডিউল মতে সব কাজ ঠিকঠাক মতো চলছে এবং করা হচ্ছে। কোন ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতি করে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। সঠিক মানদন্ড অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের প্রজক্টে ইঞ্জিনিয়ার মো: নেজাম উদ্দিন বলেন, কিছু কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বেড়িবাঁধের মাটি ভরাট থেকে শুরু করে ব্লক বসানোর সম্পূর্ণ কাজ পাউবোর শিউিডল মোতাবেক করা হয়েছে। শিডিউলের বাইরে কোন কাজ করা হয়নি।
পাঠকের মতামত: