এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার :: অবিকল নয়, বাস্তবে দেশীয় তৈরি ধারালো ভয়ঙ্কর অস্ত্র দ্বারা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কারাতে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। সিনেমা তৈরির নামে আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবকদের হাতে ছুরি ও অস্ত্র তুলে দিচ্ছে একাধিক এনজিও। স্থানীয় ভাষায় নাটক-সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে। প্রশাসনের অনুমতিবিহীন সংস্কৃতি শিক্ষার নামে আশ্রয় ক্যাম্পে বেআইনী এসব কর্মকান্ড ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।
অভিজ্ঞ মহল বলছে, আশ্রয় ক্যাম্পে সেবার নামে দায়িত্ব পালনকারী কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের এসব কী শিক্ষা দিচ্ছে। সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কী উদ্দেশ্য রয়েছে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের। একাধিক সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে, জঙ্গী দলে টানার জন্য জেএমবি কৌশলে কিছু এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গা যুবকদের কারাতে শেখাচ্ছে। দেশীয় তৈরি কিরিচ তুলে দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের যুদ্ধংদেহী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে যে, বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত পাঠশালায় রোহিঙ্গা শিশুদের বার্মিজ ও ইংরেজী শিক্ষা দেয়া যাবে। কোনক্রমেই বাংলা শিক্ষা দেয়া যাবে না। তবে এখানে সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করার পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও এবং আল ইয়াকিনের সঙ্গে জেএমবির কানেকশন থাকতে পারে। জেএমবি সদস্যরা হয়ত ধারণা করছে, তাদের দলে টানতে হলে রোহিঙ্গা যুবকদের বাংলা ভাষা জানা দরকার। এ জন্য আশ্রয় শিবিরে সেবা প্রদানের নামে ষড়যন্ত্রকারী কিছু এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের বাংলা পাঠ্যবই শেখানো হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ‘সিপিআই’ নামে একটি এনজিও আশ্রয় শিবিরে তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এটি মিয়ানমারের এনজিও। তারা রোহিঙ্গা শিবিরে সেবার নামে ছদ্মবেশে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এনজিওটিকে মিয়ানমার সরকার সহায়তা দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। সিপিআই এনজিওর কর্মকর্তা হিসেবে মিয়ানমারের একাধিক গুপ্তচরও আশ্রয় শিবিরে কাজ করছে বলে জানা গেছে। তাই অতি উৎসাহী কিছু এনজিও’র অবৈধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।
সূত্র মতে, ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের নিয়ে ‘মেরা দিল রোহিঙ্গা’ নামে নির্মিত সিনেমায় ফাইটিংসহ নানা ভঙ্গিমায় উস্কানিমূলক সংলাপ রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ওই ফিল্মে। প্রশ্ন রেখে স্থানীয় যুবকরা বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নের কথা বলে ইউনিসেফ থেকে প্রজেক্ট নিয়ে নয়ছয় করতে কি এ তামাশা? নাকি এনজিওগুলোর উদ্দেশ্য অন্য কিছু। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, চিহ্নিত কিছু এনজিওর যদি টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য থাকলে সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার নামে রোহিঙ্গাদের কারাতে শেখানোর মানে কি? এসব অবৈধ কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে জেলা বা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়া হয়নি কেন? ছোরা-কিরিচ নিয়ে সিনেমা-নাটক ইত্যাদি তৈরির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়নি। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা এদেশে শুধুমাত্র আশ্রিত। তারা যে কোন সময় ফিরে যাবে তাদের দেশে। এদের এদেশীয় সংস্কৃতি শিক্ষা দিয়ে লাভ কি? কিছুসংখ্যক এনজিও সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলা পাঠ্যবই শিক্ষা দিচ্ছে। বাংলা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেলে রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে এদেশ ত্যাগ করে নিজের দেশে ফিরে যেতে চাইবে না বলে জানান স্থানীয় যুবসমাজ।
স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, ক্যাম্পে সংস্কৃতি শিক্ষার নাম দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের যে অপরাধমূলক ট্রেনিং দেয়া হয়েছে, তা কখনও মেনে নেয়া যায় না। এক বছরের বেশি সময় ধরে বালুখালী ক্যাম্পসহ ১২টি শিবিরে সিনেমা-নাটক তৈরির নামে রোহিঙ্গা যুবকদের ট্রেনিং শিখিয়েছে কয়েকটি এনজিও। দেড় বছর যাবৎ বিভিন্ন নাটক-সিনেমায় রোহিঙ্গাদের কৌশলে কারাতে শেখানো হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলা পড়ানো, তাদের নিয়ে নাটক-সিনেমা তৈরির কী দরকার রয়েছে। এজন্য কারাতে বা অবৈধ ট্রেনিং দেয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? কি উদ্দেশ্য নিয়ে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের এমন শিক্ষা দিচ্ছে? শিবিরে রোহিঙ্গা ছেলেদের শিক্ষার নামে অস্ত্রের বা কারাতে ট্রেনিং দেয়ায় নাখোশ হয়ে পড়েছেন তাদের পিতামাতারা।
রোহিঙ্গা যুবকদের ট্রেনিং ও কম্পিউটার শেখাতে একাধিক এনজিও এখনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখনও কাজ করছে সিপিআই নামে মিয়ানমার ভিত্তিক একটি এনজিও।
এনজিওটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তথ্য পাচার, সন্ত্রাসীদের মদদ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। সেবামূলক কর্যক্রমের নামে দুই বছর ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় কাজ করছে এনজিওটি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করার কোন ধরনের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও অন্তত অর্ধশতাধিক এনজিও পার্টনার হিসেবে কাজ করছে ক্যাম্পে। এ ব্যাপারে নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের দল ভারি করতে দলে টানছে রোহিঙ্গাদের। ইতোমধ্যে গোপনে উখিয়া- টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে কাজ শুরু করেছে জঙ্গীরা। গত মঙ্গলবার পটিয়ায় গ্রেফতার হওয়া দুই জেএমবি (জঙ্গী) সদস্যের মধ্যে মোঃ ইসমাইল (৩৩) অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। সে টেকনাফ নয়াপাড়া ক্যাম্প-১ এ আশ্রিত রোহিঙ্গা আব্দুল নবীর পুত্র।
জঙ্গী সদস্যদ্বয় উস্কানিমূলক বিভিন্ন জিহাদী বই ও লিফলেট প্রচার করার জন্য বাসে চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছিল। পটিয়া শান্তিরহাট এলাকায় বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করে ওই জঙ্গী সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত দুই জনের একজন মিয়ানমারের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আটক জেএমবির সক্রিয় অপর সদস্য আব্দুল্লাহ আল সাঈদ (৩৫) রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার আব্দুর রহিমের পুত্র। সুত্র: জনকন্ঠ
পাঠকের মতামত: