বাংলাট্রিবিউন :: ‘আমি তো সংসার-সন্তান সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। উনার ব্যাপারে পার্টির লোকজন কী চিন্তা করছে এখনও জানি না। তিনি তো দলের নেতা, তারা নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন’- বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ও চকরিয়া-পেকুয়ার সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদ। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
২০১৫ সালের ১১ মে থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ। স্বাভাবিক জীবনের বাইরে তার ছয়টি বছর কেটে গেছে সেখানে।
স্বামীর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘কোনও আপডেট নেই। যে অবস্থায় ছিল তেমনই আছে। আমরা আপিল করেছিলাম, কিন্তু এখনও শুনানি শুরু হয়নি।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর আক্ষেপ, ‘করার কিছু নেই আর। এমন কোনও চেষ্টা তো বাকি নেই যা করিনি। আল্লাহ ভালো জানেন, সামনে কী অপেক্ষা করছে।’
হাসিনা আহমেদ উল্লেখ করেন, সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তিনি এখনও অসুস্থ।
গত বছরের মে মাসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে সালাহ উদ্দিন তার জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিলেন। তার ভাষ্য ছিল, দেশে ফেরার চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই তা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ভাড়া করা একটি কটেজে একাকী জীবন কাটছে সালাহ উদ্দিনের। তার চিকিৎসা ও জীবনযাপনের আর্থিক ব্যয়ের পুরো সহায়তা করা হচ্ছে পারিবারিকভাবে।
বিএনপির দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মূলত এ কারণেই দলীয়ভাবে তার মুক্তির বিষয়ে কোনও ধরনের উদ্যোগ নেই। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে সব সময়ই গুরুত্ব পেয়েছেন তিনি।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ভারতে আটক হওয়ার সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজের পর সন্ধান চেয়ে ২০১৫ সালের ১০ মে দুপুরে একটি বিবৃতি দেন খালেদা জিয়া। পরদিন (১১ মে) তার খোঁজ পাওয়া যায়। পরে শিলংয়ে থাকা অবস্থাতেই ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।
যদিও দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্যের মুক্তি নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে কোনও উদ্যোগ নেই। এমনকি দলের ফরেন রিলেশন্স কমিটিও এটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার আজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে যে একেবারেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তা নয়। আর উদ্যোগ নিলেও কী হবে। ভারত যদি রাজি না হয়, তাহলে কীভাবে মুক্তি পাবেন?’
সেক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে দলীয়ভাবে যোগাযোগ করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রবীণ এই নেতার মন্তব্য, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হবে তা আমরা ভালো করেই জানি। তবু সালাহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাপারটি আলোচনার দাবি রাখে।’
এ প্রসঙ্গে হাসিনা আহমেদের আশা, ‘কিছু একটা পদক্ষেপ তো দল নেবে। তবে এখনও সে রকম কিছু জানি না।’
পাঠকের মতামত: