কক্সবাজার প্রতিনিধি :
মিয়ানমারের নাগরিক আবুল কাশেম লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকছেন এক মাসের বেশি সময় ধরে। সেখানে কর্মরত একএনজিও কর্মীর মাধ্যমে তিনি মোবাইল ফোনে জানান, ওখানে প্রথমে থাকা-খাওয়ার কস্ট হলেও এখন অনেকটা ভাল আছে। এখন সমস্যা হচ্ছে বৃষ্টি আর বাতাস। গত বৃহস্পতিবারও বৃষ্টির পরে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারেননি। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে পাশের একজনের বাড়ি বা ছাউনিতে রাত কাটিয়েছেন।
আবুল কাশেম যা বললেন শুদ্ধ বাংলায় তাঁর অর্থ দাঁড়ায় এরকমÑআমাদের ঘর বলতে পলিথিনের ছাউনি। এখানে একটু বেশি বৃষ্টি হলে সেটা কোন না
কোনভাবে ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরের ভেতরে কাঁদা হয়ে যায় তখন বসেও থাকায় যায় না। আর বাতাস হলে আরো ভয়ের মধ্যে থাকি। যদি বাতাসে উড়ে যায় বা ভেঙ্গে যায় তাহলে আরো বিপদ। তাই বৃস্টি আর বাতাস হলে আল্লাহকে স্মরন করে পরিবার নিয়ে বসে থাকি। একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা বশির ঊল্লাহ বলেন, ‘আমি যে জমি পেয়েছি সেটা পাহাড়ের একদম ঢালুতে। তাই তাই যে কোন মূহুর্তে মাটি পড়ে ঘর ভেঙ্গে পড়তে পারে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটি-পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরের মধ্যে কাঁদা-মাটিতে একাকার হয়ে যায়। ঘরে থাকার উপায় থাকেন না। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির পরে ঘরের অবস্থা খুবই করুন হয়েগেছে। এখন আছি পরিচিত আরেক জনের ঘরে। তার ঘরেও মানুষ বেশি। সে কারনে ২/৩ টি ঘরে ভাগ হয়ে আছি। মোট কথা বৃষ্টি আর বাতাস হলে খুব ভয়ের মধ্যে থাকি। তিনি বলেন, আমাদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করতে এখানে সরকারে পক্ষ থেকে অনেক মানুষ আছে, কিন্তু ঝড় বৃষ্টি হলে তারা কি করবে ?
মোছনি ক্যাম্পে অবস্থান রত আসির আলী বলেন, জীবন বাচাঁতে আজ আমি এখানে পড়ে আছি। অথচ মংডুতে আমার অনেক বড় বাড়ি ছিল। সেখানে যেকোন ধরনের বিপদ-আপদে মানুষ আমার ঘরে আশ্রয় নিতো। সারা জীবন আমি অনেক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি। ভাত কাপড় দিয়েছি অথচ আজ আমি নিজেই আশ্রয়হীন। সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ঋন কখনো কোন রোহিঙ্গা শোধ করতে পারবে না। বাংলাদেশের হুকুমত (সরকার) আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। খাবার থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব কিছু করছে। আর এত বেশি ত্রাণ দিচ্ছে এখন খেতে না পেরে অনেকে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এখানে আসার পরে কয়েক বার বৃস্টির কারনে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যখন বৃষ্টি হয় তখন পরিবার পরিজন নিয়ে খুব বিপদে থাকি। কারন পাহাড়ের জমিতে আমরা যে ঘর করেছি মোটা একটি পলিথিন দিয়ে ইতিমধ্যে পলিথিনে কয়েকটি ফুটো হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি হলে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। আর জোরে বাতাস হলে পলিথিন ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাই খুব ভয়ে থাকি যখন বৃস্টি আর বাতাস হয়।
এ ব্যাপারে লেদা ক্যাম্পে কর্মরত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় বেশ নিয়ন্ত্রণে। তবে বৃষ্টি হলে তাদের মধ্যে একটি আতংক তৈরি হয়ে যায়। সব ঘর কাঁচা এবং খুবই নরম হওয়ায় বৃস্টি এবং বাতাস হলে যে কোন মূর্হতে নস্ট হয়ে পড়ার আশংকা আছে। আমি দেখেছি, আকাশে ভারী মেঘ হলেও তারা খুব দুঃশ্চিন্তায় থাকে।
কুতুপালং ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, এখানে কিছু বাড়ি আছে একদম পাহাড়ে, আবার কিছু আছে পাহাড়ের ঢালুতে। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী বৃষ্টি হলে এখানে পাহাড় ধ্বসের আশংকাও আছে। আর স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে সাথে বাতাস হলে ওইসব ঘর এমনিতেই ভেঙ্গে পড়বে। অবশ্য এর চেয়ে বেশি কিছু করা আপাতত সম্ভবও নয়। এত বেশি মানুষকে ভালভাবে ঘর তৈরি করে দিতে গেলে অনেক জায়গা এবং সহযোগিতার দরকার।
এ ব্যপারে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবন মান উন্নয়নে সব ধরনের সেবা মূলক কাজ করছে সরকার। এখানে স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে পানি স্যানিটেশন এবং পুষ্টি সব দিকে নজর রাখা হচ্ছে। আর কিছু প্রাকৃতিক ব্যাপার আছে। সেখানে কারো কিছু করার থাকে না। এর মধ্যে ঝড় বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। এটা ঠিক যে বৃষ্টি বা ভারী বাতাস হলে রোহিঙ্গাদের কিছু সাময়িক সমস্যা হয়। তবে আমার জানা মতে, এখানে প্রচুর দেশি বিদেশী সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রনে। সব দিকে শৃংখলা ফিরেছে। আর তাদের সব দিকে খেয়াল রাখা হচেছ।’
পাঠকের মতামত: