ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সহায়তা নেমে এসেছে অর্ধেকে, চাওয়া ৭৫৯৩ কোটি টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয়

বিদেশিদের সহায়তায় আগ্রহ হারাচ্ছে রোহিঙ্গারা

অনলঅইন ডেস্ক :: রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ ক্রমেই কমে আসছে। দিন দিন কমছে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সহায়তা। বিপরীতে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। খাদ্য, বাসস্থানসহ তাদের ব্যয়ও বাড়ছে। ২০২১ সালের জন্য ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা চেয়ে পাওয়া গেছে মাত্র ৬৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি) চাওয়া হয়েছে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায়। এ অর্থের কত অংশ পাওয়া যাবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এই সংশয় নিয়েই আজ ঘোষণা হবে এ বছরের জেআরপি।

জানা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য সব প্রয়োজনের বিষয়গুলো নিরীক্ষা করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব সংস্থা প্রতি বছর জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ঘোষণা করে থাকে। পুরো বছরে দাতাদের কাছ থেকে দেওয়া অর্থ অনুসারে খাতভিত্তিক এসব প্রয়োজন মেটাতে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনগুলো মেটানো হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে প্রয়োজনের ৮২.৬ শতাংশ মেটানোর অর্থ পাওয়া গেছে। এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৩৭.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের বছর ২০২০ সালে ৭৮ শতাংশ প্রয়োজন মেটানোর অর্থ পাওয়া যায়। এর পরিমাণ ছিল ৮০৪.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর ২০২১ সালে পাওয়া গেছে প্রয়োজনের ৭২ শতাংশ অর্থ। এর পরিমাণ ছিল ৬৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের বাস্তবায়িত হওয়া জয়েন্ট রেসপন্ন প্ল্যানের খাতওয়ারি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিক্ষা খাতে প্রয়োজনের তুলনায় পাওয়া গেছে মাত্র ১৪ শতাংশ, পুষ্টিতে ৪৪ শতাংশ, সাইট ম্যানেজমেন্টে ১৩ শতাংশ, জরুরি টেলিকমিউনিকেশনে ২৬ শতাংশ, খাদ্য নিরাপত্তায় পাওয়া গেছে ৬৩ শতাংশ, নিরাপত্তায় ৬৫ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৩১ শতাংশ ও বাসস্থানে পাওয়া গেছে ১০ শতাংশ এবং লজিস্টিকে কোনো অংশই পাওয়া যায়নি। গত বছরে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ২৯৫.৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ৯০.২২ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ৭৬.৮৪ মিলিয়ন, জাপান ১৯.৮৬ মিলিয়ন, ইউনিসেফ ১৮.৪২ মিলিয়ন, কানাডা ১৭.২৩ মিলিয়ন, জার্মানি ১৩.৭৯ মিলিয়ন এবং অন্যান্য ৯১.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর চাহিদা পূরণ কঠিন হওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে ১৮ কোটি ডলারের অতিরিক্ত অনুদান প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন তৈরি করা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থে ১৭৮টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে ১৩৬টি সংস্থা। প্ল্যান অনুসারে মোট ৯ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ বছরের নিচে ৪ লাখ ৮১ হাজার রোহিঙ্গা শিশু আছে। প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গা আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার। সহায়তা চাওয়া ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চাওয়া হয়েছে ২০৯.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্বাস্থ্য খাতে ১১০.৮ মিলিয়ন, বাসস্থানের জন্য ৯৩ মিলিয়ন, পানি-স্যানিটেশনের জন্য ৮০.২ মিলিয়ন, নিরাপত্তার ৭৫.৩ মিলিয়ন, শিক্ষার জন্য ৭০.৫ মিলিয়ন, পুষ্টির জন্য ৩৫.৭ মিলিয়ন, পারস্পরিক যোগাযোগে ৭.৯৬ মিলিয়ন, জরুরি টেলিযোগাযোগে ১.৭ মিলিয়ন, লজিস্টিকের জন্য ০.৯ মিলিয়ন, কো-অর্ডিনেশনে ৪.৩ মিলিয়ন, মানবিক কাজে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবায় ৪.৩ মিলিয়ন এবং ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে।

আজ বিকালে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ঘোষণা করা হবে। এতে যুক্ত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আইওএমের মহাপরিচালক অ্যান্তনিও ভিতোরিনো, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. ইকো নারিতা প্রমুখ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফগানিস্তানে নতুন করে মানবিক সংকট আর প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে দাতারা রোহিঙ্গাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে। তারা বলছেন, যে হারে বৈদেশিক সহায়তা কমছে, তাতে ১০ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ তৈরি করবে। অর্থাৎ সংকট প্রলম্বিত হলে এ দায়িত্ব এককভাবে বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়তে পারে! রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো বছরই রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য চাহিদার পুরো অর্থ আসেনি। ২০১৯ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা অর্থায়ন আগের বছরের তুলনায় অব্যাহতভাবে কমছে।
পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, সহায়তা কমার পেছনে আফগানিস্তান ইস্যুর একটা বড় প্রভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটা অনেকাংশে দুর্বল হয়ে গেছে আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয়ের কারণে। আরেকটি ব্যাপার হলো, দাতারা দেখতে পাচ্ছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান না। রোহিঙ্গাদের কবে নাগাদ আমরা প্রত্যাবাসন করতে পারব, সে বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ সরকার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে, কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায়ের কোনো চাপই কাজে আসছে না। এসব কারণেই দীর্ঘমেয়াদি অনুদান কমে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটের।

পাঠকের মতামত: