ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপি জোট নির্বাচনে আসার খবরে সরকারে নতুন হিসাব

ডেস্ক নিউজ :
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি জোট নির্বাচনে আসার খবরে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে সরকার। আন্দোলনমুখী সরকারবিরোধী জোট নির্বাচনমুখী হলে সরকারের করণীয় কী হবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ক্ষমতাসীন দলে। মাঠের বিএনপি জোটকে নির্বাচনে মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণে কাজ করছেন নীতিনির্ধারকেরা। বিএনপি জোট এলে নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের বিভিন্ন ফোরামে একাধিকবার এ ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্ষমতাসীনদের কৌশল চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি জোট নির্বাচনে এলে শুরুতেই জোটবদ্ধ নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের বাইরে সরকারপন্থী বিভিন্ন দলকেও আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কৌশল বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নেয়া হবে। কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করা হবে। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের ওপর সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব অটুট রাখা হবে। আর এভাবেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় সরকার।

সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সরকার দেশ-বিদেশে চরম ইমেজ সঙ্কটে ছিল। একাদশ জাতীয় নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে সরকারের ওপর নানা মহলের চাপ আছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সরকারবিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনার জন্য তফসিল ঘোষণার আগ মুুহূর্তে এ চাপ বাড়ছিল। সে জন্য তফসিলের ঠিক আগে বিএনপি জোটের সাথে তড়িঘড়ি সংলাপে বসে সরকার। তবে সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংসদ ভেঙে দেয়াসহ মূল দাবিগুলো আদায় না হওয়ায় আন্দোলনমুখী হওয়ার ঘোষণা দেয় সরকারবিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে সরকারও খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে। সরকারবিরোধীদের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলা করে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সহজ হবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারে খানিকটা স্বস্তি এলেও নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবেলা নিয়ে নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বিএনপি নির্বাচনে এলে রাজনীতির মাঠ ও ভোটকেন্দ্রে কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএনপি জোট এবার নির্বাচন বর্জন করলে সরকারি জোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টিকে আলাদা নির্বাচনের কথা বলা হতো। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে এলে তারা সরকারের সাথেই জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। এ ব্যাপারে সরকারের সাথে আগেই বোঝাপড়া ছিল। পাশাপাশি সরকারপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে নেয়া না হলেও তাদের কিছু আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনের জন্য যেসব প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রাখা হয়েছিল এবার তার বেশ কিছু পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মামলা ও দলীয় নেতাকর্মী হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে; যাতে বিএনপি প্রার্থীদের পরাজিত করে তারা জয়ী হয়ে আসতে পারেন। আর ভোট ও রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান গ্রেফতার ও দমনপীড়ন অব্যাহত রাখা হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে না পারেন তা কঠোরভাবে মনিটর করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিশেষ করে সর্বশেষ খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার ও প্রশাসন যে কৌশল নিয়েছিল সেই কৌশলেই জাতীয় নির্বাচন সারতে চায় সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিনজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসার খবরে আমরা যেমন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম তেমনি টেনশনও কম নয়। কারণ এবার আর ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া যাবে না। সে জন্য আমাদের কৌশলও নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দল ও জোটের প্রার্থীদের বাইরে কোনো নেতাকর্মী যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হতে পারেন সে ব্যাপারে সজাগ থাকা হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণাও আসতে পারে।

তাদের একজন বলেন, বিএনপি ছাড়া একতরফা নির্বাচন যত সহজ ছিল, তত বেশি কঠিন হবে বিএনপি নির্বাচনে এলে। কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তারা ভোট ঠেকানোর চেষ্টা করলেও এবার নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠবে। আর তাদের মতো একটি বড় দল মাঠে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশ পাল্টে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেত্রীও বারবার সতর্ক করেছেন। সেজন্য নির্বাচন নিয়ে আমরা এবার বেশি সিরিয়াস। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ যাতে আমাদের দখলে থাকে সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা আরো বলেন, নির্বাচনী মাঠ দখলে রাখতে দলের পাশাপাশি প্রশাসনও তৎপর থাকবে। বিএনপি জোটের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তারা যাতে নির্বাচনী মাঠে ‘একটিভ’ হতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

পাঠকের মতামত: