ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসেছি, দেহ ব্যবসা করতে নয়’

অনলাইন ডেস্ক :rohingya-10

ঘোমটা মুখে দাঁড়ানো সুন্দর মেয়েটার ছবি তোলা যাচ্ছিল না। প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছিল ক্যামেরা থেকে আড়াল হওয়ার জন্য। স্পষ্টত চেহারায় আভিজাত্যের ছাপওয়ালা মেয়েটি শেষে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হল।

মেয়েটির নাম হামিদা। মিয়ানমারের বুচিদং টমবাজার থেকে পালিয়ে এসে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছে সে ও তার মা। কিন্তু অকপটে জানালো আসার পর থেকে স্বস্তিতে নেই মা-মেয়ে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের চলমান হামলার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই হামিদার মত অবিবাহিত তরুণী। প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসলেও এসব তরুণীদের অস্বস্তির কারণ প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে এ দেশিয় লম্পট ও দালালদের কালো হাত। এ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রোহিঙ্গা তরুণীরা।

নিজের চোখের সামনে বাবাকে গুলি করে হত্যা করতে দেখা হামিদা জানালেন, “বাবাকে চোখের সামনে মরতে দেখেছি। নিজের প্রাণ বাঁচাতে চরম আতঙ্ক নিয়ে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসেও শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত লম্পটদের কালো হাত তাড়া করছে। এই আতঙ্কের কারণে একটুও শান্তি পাচ্ছি না”।

একটু পর দৃঢ় কন্ঠে আরো জানাল-“আশ্রয় নিতে এসেছি,দেহ ব্যবসা করতে আসিনি”।

মেয়ের কথায় মা আলেয়া খাতুনের মুখে চিন্তার ছাপ আরো স্পষ্ট। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলেন, “নিজ দেশ ছেড়ে জান বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু রয়েছে। আমার খুব ভয়, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ হাতে ধরে রেখেছি”।

শুধু হামিদা নয়, অনুপ্রবেশকারী অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাড়া নিয়ে দালালদের বিড়ম্বনা, নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার, মোবাইল সেট কেড়ে নেয়া, গরু-ছাগল-মহিষ লুটপাট করা, পানি-খাবার সংকট ইত্যাদির পাশাপাশি চরম সমস্যায় ভুগছেন রোহিঙ্গা সুন্দরী তরুণীরা।

যেসব মা অথবা বাবার কাছে সুন্দরী তরুণী রয়েছে তারা চরম নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছেন। পালিয়ে আসা তরুণীদের মধ্যে অধিকাংশরই কোনো না কোন আত্মীয় হত্যার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে তারা এমনিতেই শোকের সাগরে ভাসছে। তার উপর লম্পটদের হানা তাদেরকে অসহায় করে তুলেছে।

উখিয়ার বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমার মংডু থেকে আসা দুই মেয়ের বাবা হামিদুল আজম। বড় মেয়ে জান্নাতুলের বয়স ১৮ এবং ছোট মেয়ে পারুলের বয়স ১৪। জান্নাতুল দেখতে খুবই রুপসী।

হামিদুল বলেন, ‘প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বড় মেয়ে জান্নাতের বিয়েও ঠিক হয়েছিল, পার্শ্ববর্তী একটি ছেলের সাথে। আমরা লাম্বার বিল সিমান্ত দিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করি। কিন্তু আসার পথে দুইজন লোক তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার কথার নামে বলেন “শহরে নিয়ে যাবে। চাকরির করার সুযোগ করে দেবে”।’

তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলে একজন আমার বড় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি তাতে রাজি হইনি”।

অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানান, ‘লম্পটদের পাশাপাশি কিছু দালালও রয়েছে সুন্দরী মেয়েদের ভাগিয়ে নিতে। অসহায়ত্বের সুয়োগ নিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিয়ের প্রস্তাবও। যা রীতিমতো লোক দেখানো।’

টেকনাফে’র ধামনখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন ১৬ বছর বয়সী মনোয়ারা ও তার মা নুরতাজ। তার সুন্দরী
মেয়েকে নিয়ে সে পড়েছে মহা সমস্যায়। নুরতাজ বলেন, “কিছু লোক এসে আমি এবং আমার মেয়েকে নিরাপদে রাখবে বলে অনুরোধ করে। তাকে লোভও দেখাচ্ছে। আমি কিন্তু ভয় পেয়েছি”।

উখিয়া টেকনাফের তমব্রু বালুখালী, কুতুপালং, আঞ্জুমানপাড়া, রহমতের বিল, ধামনখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় কোন কারণ ছাড়া কিছু যুবককে মোবাইল ফোন নিয়ে ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে দেখা গেছে। এদের আচরণ ও গতিবিধি যথেষ্ট সন্দেহজনক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সংখ্যা খুব অপ্রতুল হওয়ায় নিরাপত্তার প্রকট সঙ্কট বিরাজ করছে।

এছাড়া বর্তমানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারিও বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: