আন্তর্জাতিক ডেস্ক :::
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের টাকার পরিমাণ এক বছরে আরও বেড়ে গেছে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে টাকা রাখার পরিমাণ ১৯ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ অবশ্য দাবি করেছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য তাদের কাছে নাই।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকের লোপাট হওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা হওয়ার কারণেই বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে টাকা জমা রাখা হয়েছে ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার পাঁচশ ৬৬ কোটি টাকা।
২০১৫ সালে এসব ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে টাকা জমা করা হয়েছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় চার হাজার সাতশ ১৭ কোটি টাকা। এক বছরে টাকা জমা রাখার পরিমাণ ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬` শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে নাগরিকদের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক ও সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখার পরিমাণ কমেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে টাকা রাখার পরিমাণ বেড়ে গেছে।
২০০৯ সালের পর থেকে ২০১০ সাল ও ২০১৪ সাল ছাড়া বাকি প্রতিটি বছরেই এসব ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে টাকা জমা রাখার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০১৬ সালে এসে এসব ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে রাখা টাকার পরিমাণ ২০০৯ সালের তুলনায় চার গুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, যে টাকার হিসাব দেয়া যায় না বা যার উৎস বৈধ নয়, এমন টাকাই বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে জমা রাখেন। কারণ, সুইস ব্যাংক তার আমানতকারীদের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশের কালো অর্থনীতির আকার ফরমাল অর্থনীতির প্রায় সমান। আর কালো অর্থনীতির টাকা অপ্রদর্শিত অবৈধ টাকা। এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচার হয়। এই টাকা আর কখনো বাংলাদেশে আসবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, আমার ধারণা প্রধানত তিনটি কারণে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বাড়ছ। সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার টাকা লুট হয়েছে। সেই ব্যাংক লুটের টাকা সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে। এটা ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতিরই ফল। আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা পাচার ছাড়াও ঘুষের টাকা পাচার বেড়েছে। এবং বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের যারাব্যবসা করছেন, অর্থ উপার্জন করছেন, তাদেরও একটি অংশ সুইস ব্যাংকমুখী হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ মে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচারের যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নয়শ ১১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার আটশ ৭২ কোটি টাকা।
এবারের প্রতিবেদনে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭ হাজার পাঁচশ ৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এই অর্থ বাংলাদেশের দুটি বাজেটের সমান। ডয়েচে ভেলে।
পাঠকের মতামত: