ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বরইতলী এক আওয়ামী লীগ নেতা মাদরাসার খেলার মাঠ দখলে বসতি নির্মাণ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার ইশারায় চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পহরচাঁদা ফাজিল মাদরাসার খেলার মাঠ জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কয়েকটি দখলবাজ চক্র ইতোমধ্যে মাদরাসার খতিয়ানভুক্ত জায়গার খেলার মাঠ দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ বসতি নির্মাণ করেছে। এখন খেলার মাঠে বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার খোলার প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিষয়টির আলোকে প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যে মাদরাসার পক্ষথেকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলমকে মৌখিক এবং চকরিয়া থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলেও দখলবাজ চক্রের লোকজন এখনও খেলার মাঠ দখলে রেখেছেন। এই অবস্থার কারণে মাদরাসার খেলার মাঠটি রক্ষা নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী এলাকাবাসির মাঝে চরম উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মাদরাসা সুপার মোহাম্মদ আবু সাঈদ আনসারী বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় দায়ের করা আর্জিতে জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে বরইতলী ইউনিয়নে অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পহরচাঁদা ফাজিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এলাকার শিক্ষানুরাগী প্রয়াত জমিদার মরহুম ফজলুল করিম চৌধুরী, মরহুম নুরজাহান খানম, মরহুম আবদুল হামিদ, মরহুম আবুল কাশেম, মরহুম অজিউল্লাহ, মরহুম আলী হোসেন, মরহুম মাস্টার গোলাম কাদের ওয়ারিশ প্রদত্ত জমিসহ মোট এক একর ৪০ শতক জমিতে মাদরাসা এবং খেলার মাঠটির অবস্থান। উল্লেখিত জমির বিপরীতে মাদরাসার নামে আলাদা খতিয়ানও চুড়ান্ত প্রচার হয়েছে।

অবশ্য খেলার মাঠের আগে সেখানে একটি দিঘি ছিল। ২০০১ সালে দিঘির মধ্যভাগ দিয়ে নতুন পেকুয়া-মগনামা সড়কটি সম্প্রসারণ হওয়ার ফলে দিঘিটি দুইভাবে বিভক্ত হয়। এরপর থেকে সড়কের দক্ষিন পুর্বঅংশের জায়গাটি মাদরাসার খেলার মাঠ এবং পশ্চিম উত্তরাংশের জায়গায় দিঘির অবশিষ্ট অংশ পুকুর হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে।

মাদরাসা সুপার আবু সাঈদ আনসারী বলেন, সেই থেকে খেলার মাঠে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করে আসছে। তবে করোনাকালীন সময়ে মাদরাসার শিক্ষাক্রম বন্ধ থাকায় খেলার মাঠও ব্যবহৃত হচ্ছিল না। এই সুযোগে সম্প্রতি সময়ে খেলার মাঠের ওই জায়গাটির উপর কুনজর পড়ে স্থানীয় দখলবাজ চক্রের।

এরই জেরে চক্রের লোকজন রাতের আঁধারে খেলার মাঠের পুর্বকোণে একটি অবৈধ বসতি নির্মাণের মাধ্যমে জবরদখল কার্যক্রম শুরু করে। ঘটনাটি জানতে পেরে মাদরাসার পক্ষথেকে দখলবাজ চক্রকে বাঁধা দিলেও তাঁরা কর্ণপাত করেনি। বরং সেখানে তাঁরা আবারও স্থাপনা নির্মাণের জন্য ইট বালু কংক্রিট এনে মজুদ করেছে। পরে বিষয়টির আলোকে মাদরাসা কমিটির সভাপতি জেলা পরিষদের সদস্য লায়ন কমরউদ্দিন আহমদ, কমিটির সদস্য বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, কমিটির সদস্য শীলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন এবং কমিটির অন্য সদস্যরা দখলবাজ চক্রের কবল থেকে মাদরাসার খেলার মাঠটি রক্ষায় সহযোগিতা চেয়ে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলমের কাছে নালিশ করেন।

একই ঘটনায় মাদরাসা সুপার আবু সাঈদ আনসারী বাদি হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারী চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। এতে আসামি করা হয়েছে দখলে জড়িত বরইতলী পহরচাঁদাস্থ খাজানগর এলাকার আবদুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ আলী বাদশা, আমির হোসাইন, মোহাম্মদ হোসাইন, মাহমুদুল করিমসহ আরও সাত-আটজনকে। চকরিয়া থানার ওসি শাকের মুহাম্মদ যোবায়ের অভিযোগটি আমলে নিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র আইসিকে (ইনর্চাজ) পুলিশ পরিদর্শক মাহতাবুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মাদরাসা সুপার আবু সাঈদ আনসারী জানান, খেলার মাঠের ওই জায়গায় ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিই। এরই আলোকে গতবছর খেলার মাঠের ওই জায়গায় নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ জাফর আলম।

তিনি অভিযোগ করেছেন, সর্বশেষ মাদরাসার খেলার মাঠ দখলের ঘটনায় প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যে মাদরাসার পক্ষথেকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলমকে মৌখিক এবং চকরিয়া থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলেও দখলবাজ চক্রের লোকজন এখনও খেলার মাঠ দখলে রেখেছেন। এই অবস্থার কারণে মাদরাসার খেলার মাঠটি রক্ষা নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী এলাকাবাসির মাঝে চরম উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসি ও অভিভাবক মহল অভিযোগ তুলেছেন, মাদরাসার খেলার মাঠ দখলে জড়িত আছেন স্থানীয় প্রভাশালী এক আওয়ামীলীগ নেতা। মুলত তাঁর ইশারায় দখলবাজ চক্রের লোকজন ইউনিয়নে বিভিন্ন পয়েন্টে সরকারি বনভুমি, সরকারি খাসজমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা-জমি দখলে তাণ্ডব চালাচ্ছে। সর্বশেষ চক্রটি মাদরাসার খতিয়ানভুক্ত জায়গার খেলার মাঠ দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এখন ইট বালু কংক্রিট মজুদ করে ফের কোচিং সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে খেলার মাঠের পুরো জায়গা দখলে নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।

পহরচাঁদা ফাজিল মাদরাসার খেলার মাঠ জবরদখলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া এবং পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্য। তারা বলেন, দিনদুপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ দখলের ঘটনা একেবারে ডাকাতির মতো। এইধরণের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি দখলবাজ চক্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বিষয়টি অবহিত করা হলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষ তৈরীর পাঠশালা। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা বা খেলার মাঠ দখলে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া যাবেনা।

কাগজপত্রে জায়গাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হয়ে থাকলে সেখানে যতই প্রভাবশালী জড়িত থাকুক নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন শিক্ষার অগ্রগতি উন্নয়নে সবার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করবে।

পাঠকের মতামত: