ঢাকা: যুব বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস লিখলো বাংলাদেশ। আগে নয় বার ব্যর্থ হলেও দশম বারের চেষ্টায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো বাংলাদেশের যুবারা। প্রথমবার শেষ চারে খেলার গৌরব অর্জন করলো টাইগার জুনিয়ররা। শুক্রবার ছুটির দিনে প্রায় হাজার দশেক দর্শকের হর্ষধ্বনি, উৎসবের তালে ১৮ বছরের আক্ষেপ ঘুচালো মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকরা পারেনি নিজেদের সময়ে। দেশের ক্রিকেটে সেই অপূর্ণতাকে ঢেকে দিলেন মিরাজ-জাকিররা। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালকে ৬ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক রাজু রিজালের হাফ সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ২১১ রান করে নেপাল অনূর্ধ্ব-১৯ দল। জবাবে জাকির হাসান ও মিরাজের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৫ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ১০ বল আগে আসা জয়ে ম্যাচ সেরা হন মিরাজ।
২১২ রানের টার্গেটে খেলতে নামা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি বরাবরের মতোই ব্যর্থ দলকে ভালো শুরু এনে দিতে। দলীয় ১৭ রানে সাইফ হাসান (৫) এলবির ফাঁদে পড়েন দামালার বলে। দ্বিতীয় উইকেটে পিনাক ঘোষ ও জয়রাজ শেখ দলের হাল ধরেন। নেপালদের বোলারদের অতি সতর্কতায় খেলতে গিয়ে তারা রানের চাকাও বেশ শ্লথ করে ফেলেন। তাদের ৪৬ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় দুজনের ভুল বোঝাবুঝিতে পিনাক রান আউট হলে। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে দুজনই একপ্রান্তে পৌঁছে যান। আউট হয়ে উইকেটেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ৫৪ বলে ৩২ রান করা পিনাক।
ইনফর্ম নাজমুল হোসেন শান্ত (৮) অবশ্য এদিন উইকেটে থিতু হতে পারেননি। সেট হয়েও অতীতের মতোই ইনিংস বড় করতে না পারার দোষে দুষ্ট হয়ে দলীয় ৯৮ রানে ফিরেন জয়রাজ। ৬৭ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। জাকির হাসান ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের পঞ্চম উইকেট জুটিই জয়ের পথ দেখায় বাংলাদেশকে। শঙ্কা কাটানোর সঙ্গে রান বলের দূরত্ব সবই ধীরে ধীরে কাটিয়ে দেন তারা দুজন। ঘনীভূত হওয়া চাপটাও ক্রমশ উতরে যায়। ৪৪ তম ওভারে ১২ রান নিয়ে উল্টো নেপালকেই চাপে ফেলে দেন মিরাজ-জাকির।
পরের ওভারেই চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাকির। ব্যক্তিগত ২৫ রানে স্ট্যাম্পিং থেকে বেঁচে যাওয়া মিরাজও হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে যান। শেষ অবধি আর কোনো বিপদ হতে দেননি তারা। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে চার ও দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন জাকির হাসান। ৭৭ বলে ৭৫ রানের (৫ চার, ১ ছয়) দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৬৫ বলে ৩ চারে ৫৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। নেপালের দামালা ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ভালোভাবেই লড়াইয়ের জ্বালানিটা তুলে নিয়েছিল টসজয়ী নেপাল। স্বাগকিতদের বোলিংয়ের বাধাকে দমিয়ে রেখে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দলটি। নেপালের ইনিংসটা বেড়ে উঠেছে ছোট ছোট কয়েকটি জুটির উপর ভর করে। এক্ষেত্রে তিনটি জুটির অংশ নিয়ে বড় অবদান রেখেছেন রাজু রিজাল। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওপেনার দামালার সঙ্গে ৪৪, চতুর্থ উইকেটে আরিফ শেখের সঙ্গে ৫১ ও পঞ্চম উইকেটে রাজবীর সিংয়ের সঙ্গে ৩২ রানের জুটি গড়েছেন তিনি। ৭ম উইকেটে ২৫, ৮ম উইকেটে ২৪ রানের দুটি জুটিও গড়েছিল নেপালের টেলএন্ডাররা। সম্মিলিত চেষ্টার প্রয়াসই পরিলক্ষিত হয়েছে নেপালের ব্যাটিংয়ে।
সঙ্গীরা ইনিংস বড় করতে না পারলেও রাজু রিজাল তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৮০ বলে অনবদ্য ৭২ রানের (৮ চার, ১ ছয়) ইনিংস খেলেছেন নেপালের অধিনায়ক। নিজেদের ভুল ও বাংলাদেশের ভালো ফিল্ডিংয়ের যোগফলে রান আউট হয়েছেন রাজু রিজালসহ নেপালের চার ব্যাটসম্যান। এদের মধ্যে দামাল ২৫, কুশাল বুরটেল ১৪, সুশীল কানদেল ২ রানআউটের কোপানলে পড়েন।
যদিও ইনিংসের শুরুতে ১৯ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল নেপাল। সন্দ্বীপ সুনারকে (৭) সাইফুদ্দিন, যুগেন্দ্র সিং কারকিকে (১) ফেরান মেহেদী হাসান রানা। পরে আরিফ শেখ ২১, ডিপেন্দ্র সিং আইরির ২২ রান ও প্রেম তামাংয়ের ২৪ বলে অপরাজিত ২২ রানের বদৌলতে নেপালের স্কোরটা দুশো পার হয়। বাংলাদেশের সাইফুদ্দিন ২টি, মিরাজ, রানা ও শাওন ১টি করে উইকেট নেন।
পাঠকের মতামত: