ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় দিন দিন বেড়ে চলছে ফসলি জমিতে তামাক চাষ

প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা তামাকের আগ্রাসন

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: কক্সবাজার জেলায় দিন দিন বেড়ে চলছে ফসলি জমিতে বিষবৃক্ষ তামাকের আগ্রাসন। তামাক চাষের বদলে ভুট্টা ও ধান চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার পরও থামানো যাচ্ছেনা তামাক চাষ। তামাক কোম্পানীর উদ্বুদ্ধকরণ আর কৃষি বিভাগের নিরুৎসাহিতকরণের কারণে তামাক কোম্পানীর বিভিন্ন কূটকৌশলের (সিএসআর) কাছে কৃষি বিভাগ ধরাশায়ী। এক্ষেত্রে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন অতীব প্রয়োজন।

কক্সবাজার জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও রামু উপজেলার তামাকের চাষ অব্যাহত আছে। এছাড়া বান্দারবান জেলার ৩ টি উপজেলাতে ব্যাপক হারে চলছে তামাক চাষ। এসব অঞ্চলে বোরো মৌসুমের সবুজের ধানক্ষেত উচ্চ ফলনশীল তামাকের দখলে। কৃষি, সংরক্ষিত বনভূমি, খাসজমিতে চলছে উচ্চ ফলনশীল বিষবৃক্ষ তামাক চাষ। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সরকারি খাসজমি, সংরক্ষিত বনভুমি ও নদীর তীরে তামাক চাষ নিষিদ্ধ থাকলেও কাগজে কলমে তা সীমাবদ্ধ। উৎপাদিত তামাক শোধন (প্রক্রিয়াজাত) করতে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত তান্দুর (চুল্লি), এইসব তান্দুরে জ্বালানি সরবরাহে নির্বিচারে কাঁটা হচ্ছে সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বন বিভাগের গাছ, এতে প্রতিনিয়তই বিপর্যয় হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষে নারী ও শিশুদেরকেও খাটানো হচ্ছে, এতে করে বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে এসব অঞ্চলে বিষাক্ত তামাক চাষ হয়ে আসছে। বৃটিশ আমেরিকা ট্যোবাকো, জাপান ট্যোবাকো, আকিজ ট্যোবাকো, ঢাকা ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ও আলফা ট্যোবাকোসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানী দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র জনপদে তামাক চাষ ও বিস্তারে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে।

রামু চাকমারকুল এলাকার নদী তীরবর্তি এলাকার তাকাম চাষি আলিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নদীর পাশে তামাকের ফলন বেশ ভাল হয়। আর ধান চাষে ঝামেলা এবং খরচ বেশি অন্যদিকে তামাক চাষে লাভবান হওয়ার গ্যারান্টি আছে। কারণ তামাক মাঠ থেকেই নিয়ে যায় কোম্পানী গুলো। এছাড়া তারা আগে টাকা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে সে জন্য তামাক চাষ করি। এছাড়া প্রতি কানি জমি ধান চাষের জন্য বর্গা দিলে মিলে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর তামাক চাষের জন্য বর্গা দিলে পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চকরিয়া উপজেলার বমুবিল ছড়ি.সুরাজপুর মানিকপুর,কাকারা, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী, বরইতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে তামাক চাষ হয়। বমুবিল ছড়ির তামাক চাষী নরুল আমিন জানান, আমি এবার ১কানি (৪০শতক) জমিতে তামাক চাষ করেছি, চাষে বিএটি কোম্পানী অগ্রিম টাকা দিয়েছে, ঘরের জন্য সোলার বিদ্যুৎ দিয়েছে।

তামাক শুকিয়ে রেডি করে রেখেছি, ৬শ কেজি হয়েছে, প্রতিকেজি ১৭০টাকা করে কোম্পানী কিনে নেবে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে নায্য দাম পাই বলে এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই, লোকসানেরও সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে সবজি চাষ করলে লোকসান গুনতে হত। চকরিয়ার তামাক চাষী ও তামাকের পাইকারি ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন জানান, চকরিয়ায় কোম্পানীর রেজিষ্টার্ডকৃত তামাক চাষী ৯শ, এদের কাছ থেকে তামাক কোম্পানী সরাসরি তামাক ক্রয় করে। রেজিষ্টারের বাইরে রয়েছে আরো তিনগুন চাষী তাদের কাজ থেকে প্রতিকেজি তামাক ১৬৮ টাকা দরে ক্রয় করে কোম্পানীর কাছে কেজি প্রতি ২/৪ টাকা লাভে বিক্রি করি। চাষীরা সবজি চাষের চাইতে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ কোম্পানীগুলো তামাক চাষে অগ্রিম টাকা ও ঘরের জন্য (বিশুদ্ধ পানির সরঞ্জাম, সোলার বিদ্যুৎ) নানা সুবিধা দিচ্ছে। সরকারি খাস জমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনের কোন প্রদক্ষেপ না থাকায় তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, আমার এলাকার চকরিয়াতে তামাক চাষ হচ্ছে, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজসহ নানা প্রনোদনা। আমরা সব সময় চায় তাকাম চাষের বদলে কৃষক উচ্চ ফলনশীল ধান, ভুট্টা, সবজি চাষ করুক। কিন্তু এটাও সত্যি এর পরও কিছু জায়গায় তামাক চাষ হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: