বদরখালীতে প্যারাবন নিধনের অভিযোগে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে গত ২৩ অক্টোবর মামলা করেছে। এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আবদুছ ছালাম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের নাম বাদ দিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার মধ্যে রয়েছেন কেউ লবণচাষি, কৃষক, নৈশপ্রহরী ও দোকানের কর্মচারী।
বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের সব জমি বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির আওতাধীন। এ সমিতি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সমবায় সমিতি হিসেবে খ্যাতি। বদরখালী সমিতির পক্ষ থেকে ৯টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। লটারির মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডকে একটি করে মাছের ঘের বরাদ্দ দেওয়া হয়। বদরখালী মহেশখালী সেতুসংলগ্ন দক্ষিণ পাশের মাছের ঘেরটি ছনুয়াপাড়া লটারি ঘের নামে পরিচিত। এই ঘেরের অংশীদার ২৯ জন। উবনীগের প্যারাবন কেটে চিংড়ির ঘের তৈরি করার জন্য প্যারাবন নিধন করার সংবাদ বিভিন্ন দৈনিকে ছাপা হলে দ্রুত চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্যারাবন নিধনে ব্যবস্থা নেন। পরে এ প্যারাবন নিধনের দায়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত বদরখালী সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসররা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ও নির্বাচনের প্রার্থিতা থেকে দূরে সরাতে পরিকল্পিতভাবে পরিবেশের মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে। পরিবেশে অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় বদরখালীতে ‘বাণিজ্যের’ অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মো. মঈন এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্যারাবন নিধনের ঘটনা নিয়ে নিরীহ মানুষকে আসামি করার বিষয়টি অসত্য নয়। এই প্যারাবন রক্ষায় সকলেই আন্তরিক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কারণে প্যারাবন উজাড় করে চিংড়ি ঘের তৈরির চেষ্টা সফল হয়নি।’
জানা গেছে, গেল ১৪ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চকরিয়ায় ‘প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের’ তৈরির সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ১৭ জানুয়ারি চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মিচ মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালত প্রতিবেদন দিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালককে নির্দেশ দেন।
পরে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে প্রকৃত অপরাধীদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ১৩ জনের নামে প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অনেকে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর ‘ম্যানেজ হয়ে’ প্রকৃত আসামিদের পরিবর্তে নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করেছে।
পরে পরিবেশ অধিদপ্তর আরো একটি মামলা করে। এই মামলা আদালত আমলে নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পরিবেশ অধিদপ্তর নির্দেশ দেন। নির্দেশনার প্রায় আট মাস পরে বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উবিনীগের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন খান এবং পরিবেশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সিরাজুল হক।
তিনি জানান, সেই প্রতিবেদনে প্রকৃত ঘটনায় জড়িতদের নাম বাদ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকা এলাকার নিরীহ ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। এরমধ্যে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির দুই বারের সাবেক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অনেক জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এ হয়রানিমূলক মামলাটি করা হয়। বদরখালী ইউনিয়নে প্যারাবন নিধনের উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত মামলায় জড়িত নয় এমন ব্যাক্তিদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
উবিনীগের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন খান বলেন, ‘ঘটনার সাথে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তবে নিরীহ ব্যক্তিদের ব্যাপারে আদালতে উবিনীগের পক্ষ থেকে নারাজি আবেদন করে পুনরায় তদন্ত চাওয়া হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতিমধ্যে অন্য জায়গায় বদলি হয়েছেন। তদন্তে নিরীহ কাউকে জড়ানো হলে আমার করার কিছু নেই।’
পাঠকের মতামত: