ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

প্যারাবন দখলের পাঁয়তারা করছে প্রভাবশালীরা

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার  ::
মহেশখালী উপজেলার সমুদ্র পাড় ঘেষে গড়ে উঠা প্যারাবন দখলের পাঁয়তারা করছে একটি প্রভাবশালী মহল। নদী ড্রেজিংয়ের বালি দিয়ে প্যারাবন ভরাট করে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তারা।

স্থানীয়দের মতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ একর প্যারাবন মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। আরো ভরাটের অপেক্ষায় আছে। আর দখলকারী তালিকায় একটি নামই শুনা যাচ্ছে তিনি হলেন মহেশখালী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আ্ওয়ামীলীগের আহবায়ক মকুসদ মিয়া। আর পৌর মেয়রের প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে মুখ খুলতে পারছে না বন বিভাগ ও প্রশাসন।

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে পৌছা মাত্র চোখে পড়বে দুপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে আছে ম্যনগ্রুপ ফরেস্ট বা উপকূলীয় প্যারাবন। এই প্যারাবন সৃজন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে দ্বীপের মানুষজনকে প্রাণহানি থেকে শুরু করে যে কোন বিপদ আপদ থেকে বাচাঁয়। আর চারিদিকের প্যারাবনগুলো পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়। কিন্তু বর্তমানে আর সেই চিত্র নেই। মহেশখালী জেটি দিয়ে উঠেলেই দুপাশে দেখা যাবে বিশাল প্যারাবন এখন বালি দিয়ে ভরাট করে খেলার মাঠে পরিনত হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে মহেশখালী জেটি দিয়ে পার হওয়ার সময় রিক্সা চালক আবদুল হাকিমের কাছে প্যারাবন দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এগুলো আজকে নয় প্রায় ১ বছর আগে থেকে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, শুনেছি এগুলো আমাদের পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়া ভরাট করছে। আর উনার নাম যেখানে আছে সেখানে প্রতিবাদ করবে এমন কেউ নাই। সে রিক্সা চালকের দেওয়া তথ্য মতে জেটি দিয়ে পূর্ব দিকে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ অবস্থা সেখানে অন্তত ২০ একর প্যারাবনের জমি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে এতে অন্তত ২০ হাজার গাছ নস্ট হয়েছে। এ সময় স্থানীয় দোকানদার নাছির উদ্দিন বলেন, এগুলো নয় সামনে আরো আছে, সব প্যারাবন দখল হয়ে যাচ্ছে, নদী ড্রেজিংএর মাটি দিয়ে এসব প্যারাবন দখল করা হচ্ছে আর সবাই জানে আমাদের পৌর মেয়র এই কাজ করছে তাই কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না। শুনা যাচ্ছে এসব প্যারাবনে সামনে চিংড়ী প্রজেক্ট হবে। আর মিয়াদের পরিবার চিংড়ী ঘের করলে এমন কেউ নাই যে সেখানে হাত দেবে। সরকারও পারবে না।

এ ব্যাপারে মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম বলেন,মহেশখালী মূলজেটির পর থেকে টার্মিনাল জেটি পর্যন্ত পূর্ব দিকে অজিত পালের দোকান থেকে প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পর্যন্ত অন্তত ২০ একর এবং মূল জেটির পাশে ১০ একর প্যারাবন ইতি মধ্যে দখল করেছে স্থানীয় পৌর মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা মকসুদ মিয়া। এছাড়া মৎস অবতরণ কেন্দ্রকে নিজের ছাগলের খামার বানিয়ে দখল করেছেন তিনি। মূলক ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করছে এসব সুবিধাভোগী নেতারা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশখালীর বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা কর্মী জানান, পুরু মহেশখালীতে সবার মুখেমুখে হয়েছে বিশাল প্যারাবন দখল করেছে পৌর মেয়র। আসলে সারাদেশে আওয়ামীলীগের সমস্যা এই জায়গায়। বর্তমান পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের আহবায়ক মকসুদ মিয়ার আপন বড় ভাই আবু বক্কর ছিদ্দিক মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও এমপি প্রার্থী, আরেক ভাই আতাউল্লাহ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আর মকসুদ মিয়া নিজেও একসময় কট্টর বিএনপি ছিলেন, আর তাদের পিতা একজন রাস্ট্র স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী এবং মকসুদ মিয়ার ছেলে কিছু দিন আগে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা সহ ঢাকায় আটক হওয়ার পর বর্তমানে জেলে আছে। তার পরও আওয়ামীলীগে তাদের দাপট কমে না।

এ ব্যাপারে মহেশখালী উপকূলীয় প্যারাবনের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আসলে নদী ড্রেজিং এর মাটি প্যারাবনে পড়াতে বনের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে প্যারাবন দখলের একটি পায়তারা চলছিল এটা ঠিক তবে সেটা আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে  সমাধান করতে পেরেছি এখন সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। আর নিজের নিরাপত্তার খাতিয়ে সব কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়া, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আমি কোন প্যারাবন দখল করিনি এই কথা বলেই ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।

পাঠকের মতামত: