ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পেনশনের নামে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার!

টেকনাফ প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে পেনশনের নামে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাকে প্রধান করে তিন জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক আবুল মনজুর। অভিযুুক্ত বাকি দুজন হলেন- সাহাব উদ্দীন ও আবুল বশর।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান। বিষয়টি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ব্যাংক শাখা থেকে ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখা কর্তৃপক্ষ।

আবুল মনজুর জানান, ‘শাহ নেওয়াজের পাঠানো পেনশনের এডভাইজ ও বিলের ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকা চট্টগ্রামের একটি শাখায় পাঠানো হয়েছিল। পরে সন্দেহ হলে তা যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া প্রমাণ হয়। ভুয়া বিলের ওই টাকা ফেরত আনা হয়েছে। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন।’

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ কৌশলে গত ২২ জুন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাহাব উদ্দীন নামে একজনকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাজিয়ে দুটি পেনশন বিলের ৩৩ লাখ ৬১ হাজার টাকার এডভাইজ ও বিল তৈরি করেন।

এর মধ্যে আনুতোষিক বিল ফর্মে ৩১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪০ টাকা এবং পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (পিপিও) ফর্মে এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৪২ টাকা রয়েছে। এই এডভাইজ ও বিল গত ২৯ জুন টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখায় পাঠানো হয়। এ সময় এডভাইজ ও বিলের হার্ড ও সফট কপি ব্যাংকে জমা দিয়ে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার সাহাব উদ্দীনের হিসাব নম্বরে জমা করতে বলা হয়।

এডভাইজ ও বিল মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই টাকা বেনিফিসিয়ারি সাহাব উদ্দীনের হিসাবে জমা করে দেয়। পরে গত ৪ জুলাই পেনশন বিল নিয়ে সন্দেহ হলে টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখা কর্তৃপক্ষ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পাঠানো তথ্য যাচাই-বাছাই করতে মাঠে নামে।

এর অংশ হিসাবে বেনিফিসিয়ারি, হিসাবরক্ষণ অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস ও চট্টগ্রাম ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন, বিলটি ভুয়া এবং ইতোমধ্যে সাহাব উদ্দিন নামে কোনও সরকারি কর্মকতা/কমচারী অবসরে যাননি। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ করপোরেট শাখা থেকে পেনশন বিলের ওই টাকা স্টপপূর্বক টেকনাফ শাখায় ফেরত আনা হয়। এর ফলে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ থেকে রক্ষা পায়।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসীম বরণ সেন চকরিয়া নিউজকে জানান, ‘একজনকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাজিয়ে পেনশনের নামে বানানো বিল ভাউচারের সবগুলো ভুয়া। এই নামে আমাদের জেলায় কোনও পেনশনভোগী নেই। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এ টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন।’

তবে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, ‘সাহাব উদ্দিন নামে পেনশনের বিল আমার এখান থেকে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে কি-না এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। এ বিষয়ে দেখা করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, ‘ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে পেনশনের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমিও শুনেছি। ঘটনাটি সত্য হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষে চাইলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসবাব নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মনজুর আহমেদ চকরিয়া নিউজকে জানান, ‘পেনশনের নামে টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

পাঠকের মতামত: