মো: ফারুক. পেকুয়া :; আসন্ন ২৮ নভেম্বর ৩য় ধাপে সারাদেশের মত পেকুয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা তাদের প্রতিক পেয়ে বেশ জোরেশুরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে।
তার মধ্যে পেকুয়া সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১০ জন প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের কাংখিত ভোট প্রার্থনায় জনগণের ধারে ধারে যাচ্ছে।
তারা হলেন, নৌকার মনোনীত প্রার্থী পেকুয়া পেকুয়া সদর নন্দীরপাড়ার বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সদর শেখের কিল্লা ঘোনার বাসিন্দা নাছের গেফারী, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সদর গোঁয়াখালীর বাসিন্দা উমর ফারুক, স্থানীয় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সদর শেখের কিল্লা ঘোনার বাসিন্দা বর্তমান চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা (বর্তমানে বহিষ্কার) বিলহাচুরার বাসিন্দা ইউছুপ রুবেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুণ আইনজীবী গোঁয়াখালীর বাসিন্দা রাশেদুল কবির, স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাতবর পাড়ার বাসিন্দা মাহাবুল করিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর মাতবর পাড়ার বাসিন্দা ওমর রিয়াজ চৌধুরী, নুরুল গফ্ফার চৌধুরী ও সরওয়ার উদ্দিন।
এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৪জন মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন পেকুয়া সসদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ইউপি সদস্য/সদস্যা প্রার্থীরা বেশ জোরেশুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে নৌকার জহির, চশমার বাহাদুর শাহ, ঘোড়ার রাশেদ, আনারসের রুবেল আর টেলিফোনের ওমর রিয়াজ তাদের প্রতিক নিয়ে জনগণের ধারে ধারে ভোট প্রার্থনা করে চলছেন। অন্য প্রার্থীদের পোষ্টার চোখে পড়লেও নির্বাচনী প্রচারণা তেমন দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে মাঠে লড়াই করা নৌকার প্রার্থীর জহিরুল ইসলামের পক্ষে আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রচারণায় জোরালো ভূমিকা রাখছেন না। তবে ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাসিন্দা দলীয় বিবেচনায় না গিয়ে ব্যক্তি জহিরকে পছন্দ করছেন। এছাড়াও ১, ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ড আ’লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল কবির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকায় এ সমস্ত ওয়ার্ডে নৌকা পিছিয়ে রয়েছে এমন অভিমত। এছাড়াও নৌকার মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলামের নির্বাচনী কৌশল ও প্রচারণা যতেষ্ট দূর্বল এমন কথা বলছেন কেউ কেউ। আর মাত্র ১৪ দিন ভোটের প্রচারণা চালানোর সুযোগ থাকলেও নৌকার প্রার্থী এখন পর্যন্ত প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে পারেনি।
বিএনপি মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী এম বাহাদুর শাহ পরপর দুই বার সদর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ব্যক্তি ইমেজ দিয়ে ভোটা আদায় ও ৫নং ওয়ার্ড বাসিন্দাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাহাদুর শাহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল সদরের জনগণ। এছাড়াও সাবেক বিএনপি নেতা মাহাবুল করিম ও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ইউছুফ রুবেল নির্বাচনী মাঠে থাকায় বিএনপির বড় একটি অংশের ভোট তাদের দখলে চলে যাবে। এছাড়াও ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওমর রিয়াজ ও হাত পাখার প্রার্থী নাছের গেফারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকায় নিজ গ্রামে এক আধিপত্য ধরে রাখতে কষ্ট হবে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এম বাহাদুর শাহর। এছাড়াও সদ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামী হয়ে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারায় প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছেন তিনি এমন মত দিয়েছেন অনেকে।
যার কারণে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়া উপজেলা সদর এ আসনটিতে নৌকা, চশমা আর ঘোড়ার মধ্যে লড়াইয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছেন সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। অনেকে আবার নৌকা আর চশমার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলেও জানিয়েছেন।
নৌকার মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ার মানুষের সুসময় ও দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে পাশে আছি। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তা ও স্বচ্ছ ব্যক্তি দেখেই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রচারণায় সাধারণ জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মীরা নিজ ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কাজ করলে নৌকার জয় নিশ্চিত ইনশাল্লাহ।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউছুফ রুবেল বলেন, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নির্দিষ্ট কিছু জনপদ থমকে আছে মধ্যযুগে। যেখানে গাড়ির চাকা’ই ঘুরেনা। সারাদেশে উন্নয়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে সেখানে সদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে কিভাবে অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া এলাকা থাকে তা একটি বড় প্রশ্ন আজ! এসব এলাকার ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি অফিশিয়ালি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা। বহিষ্কার বুঝিনা আমি তৃণমূল বিএনপিকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছি।
বাহাদুর শাহ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও তার ছেলে মানিক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে বলেন, মামলা দিয়ে পিতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখলেও বিপুল ভোটে আবারো বিজয় লাভ করবে ইনশাল্লাহ।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল কবির বলেন, দীর্ঘ তিন বছর ধরে জনগণের ধারে ধারে ছিলাম। সময়ে অসময়ে তাদের পাশে ছিলাম। যেখানে নির্বাচনী প্রচারণায় যাচ্ছি সেখানে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। আশা করি সাধারণ জনগণ ২৮ তারিখ তার প্রমাণ দিবে।
পাঠকের মতামত: