পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে পেকুয়া-বরইতলী সড়ক দিয়ে চলাচলকারী চোরাই কাঠ বোঝাই ট্রাক-পিক আপ থেকে বেপারোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে পেকুয়া বাজার কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি নামের একটি সংগঠন! প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা চাঁদার টাকা উত্তোলনের জন্য মাসিক বেতনে নেজাম উদ্দিন নামের একজনকে ক্যাশিয়ার পদেও নিয়োগ করেছে ওই কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি। ক্যাশিয়ার নেজাম পেকুয়া চৌমুহুনী ও পেকুয়া বাজারে অবস্থান করে প্রতিনিয়তই চাঁদার টাকা উত্তোলন করছে। উত্তোলিত চাঁদার টাকা থেকে প্রতি মাসে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হককে ৩৫হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিটি গর্জন গাছভর্তি গাড়ি থেকে ৩হাজার টাকা করেও অতিরিক্ত চাঁদার টাকা নিচ্ছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা। প্রতি মাসে চাঁদার টাকার ভাগ পেয়ে নিরব রয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক। আর এ সুযোগে পেকুয়া-বরইতলী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লামা, আলীকদম, চকরিয়া ও আজিজ নগরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সাবাড় করে পেুকয়ার বিভিন্ন অবৈধ সমিল ও কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে অসাধু কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট। লামার আজিজ নগর কেন্দ্রীক অবৈধ কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে পেকুয়া বাজার কেন্দ্রীক কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির লোকজনের সাথে রয়েছে গভীর সখ্যতা। এছাড়া পেকুয়া বাজার কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি পেকুয়া থানার ওসির নাম ভাঙ্গিয়েও অবৈধ কাঠ পাচারকারী পিকআপ-ট্রাক থেকেও নিয়মিত চাঁদার টাকা উত্তোলন করছেন। পেকুয়া বাজার কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক সদস্যের কাছ থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া, লামা, আলীকদম ও আজিজ নগরের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিনিয়তই দিনেরাতে রাতে সমানতালে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-কাঠ! সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শুরু করে সামাজিক বনায়নও রেহাই পাচ্ছে না কাঠ পাচারকারীদের থাবা থেকে। বন ধ্বংসকারী গাছ-কাঠ পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজেশ রয়েছ্ েস্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। পেকুয়া-বরইতলী সড়ক দিয়ে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে বনের গাছ-কাঠ পাচারের মহোৎসব। এ ৮মাস পেকুয়া বাজার কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি ও বনকর্মীদের কাছে দুহাতে টাকা কামানোর ‘গুড সিজন মৌসুম’ নামেও বেশ পরিচিত!
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ফান্ডসহ সরকারী অর্থায়নে সৃজিত বন-বাগান ধ্বংসের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পেকুয়া উপজেলার ১টি রেঞ্জ অফিসের আওতায় ৩টি বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও চলছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-কাঠ পাচারের মহোৎসব। এছাড়াও লামার আজিজ নগর এলাকার বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচার হওয়া এসব কাঠ-গাছ পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে স্থাপিত অবৈধ করাতকলে নিয়ে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। পাচার হওয়া গাছ-কাঠগুলোর মধ্যে রয়েছে আকাশমণি, জারুল, জাম, গামারি, কড়ই ও গর্জনসহ নানা প্রজাতির গাছ। আজিজ নগরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচারকারীরা দিনে এসব গাছ কেটে রাতভর তা পেকুয়ার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন সমিলে পাচার করা হয়। রাত যত গভীর হয় ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বনের গাছ-কাঠ পাচার। পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন পহরচাঁদা বন বিটের সামনের পেকুয়া-বরইতলী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাঠ পাচার করে পেকুয়া বাজারে আনা হলেও ওই বনবিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি চোরাই কাঠ বোঝাই গাড়িও আটক করেনা। বনবিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারীরা বন নিধনে মেতে উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই লামা, আলী কদম, চকরিয়া ও আজিজ নগরের সংরক্ষিত সরকারী বনাঞ্চলগুলো মরুভুমিতে পরিণত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।
অনুসন্ধনে আরো জানা যায়, পেকুয়া বাজার, টইটং বাজার, হাজী বাজার, আরবশাহ বাজার ও বারবাকিয়া বাজারের অবৈধ সমিলগুলোতে এসব গাছ-কাঠ পাচার করা হচ্ছে। বারবাকিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক ও বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আমির হোসেন গজনবীর সাথে স্থানীয় স্থানীয় পেকুয়া বাজার কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি ও কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের রয়েছে দহরম-মহরম ‘লেনাদেনা’ সম্পর্ক।
টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ধনিয়াকাটা পূর্ব পাড়ার সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই সরকারী বনাঞ্চলের গাছ পাচার হয়। বন বিভাগকে গাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা কথা শুনেনা।
বারবাকিয়ার বাসিন্দা মাহমুদুল করিম অভিযোগ করে জানান, বারবাকিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্মকর্তা হাবিবুল হক ও বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবীর কারণেই বনাঞ্চল নিধনের পাশাপাশি জবর দখলও হচ্ছে। তিনি রেঞ্জারের অপসারণ করতে উর্দ্ধতন বন বিভাগের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হকের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ২৫মিনিটে একাধিকবার ফোন করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেনি। তাই অত্র সংবাদের সাথে রেঞ্জ কর্মকর্তার বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। পরে রেঞ্জ কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া গেলে যথাযথভাবে প্রকাশ করা হবে।
পাঠকের মতামত: