নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: পেকুয়ার রাজাখালীর হাজ্বী শের আলী সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫৭ জন। বিপরীতে শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৫ জন হলেও বর্তমানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২ জন। প্রধান শিক্ষকের পদটি খালী পড়ে আছে ২০১৫ সাল থেকে। এতে পাঠদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদের। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে খণ্ডকালীন ২-৩ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন পাশের জিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সুজাগীর। তাঁর মতে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে আরও ৪ জন শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে। তিঁনি বলেন, ‘ছয় বছর ধরে এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমি। এই ছয় বছরে সবসময় বিদ্যালয় শিক্ষক সংকটে থেকেছে।
পাঠদান যাতে বিঘ্ন না হয় সেজন্য ২-৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষকের ব্যবস্থা রেখে আসছি। আর আমি ভারপ্রাপ্ত হওয়াতে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক ও পর্যাপ্ত সহকারী শিক্ষক ছাড়া এভাবে তো বিদ্যালয় চলতে পারেনা।’ রাজাখালীর এই বিদ্যালয়সহ উপজেলার ৩১ প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ৫৯ শিক্ষক ছাড়াই।
শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদসংখ্যা ৩৮০টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৭৩ জন। ৫৬ বিদ্যালয়ে সমপরিমাণ প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি ৩২৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের চাহিদা আরও প্রায় ৮০ জনের। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩২১ জন। এরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে ২০ বিদ্যালয়।
সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য আছে ২৭ বিদ্যালয়ে। শিক্ষক সংকটের এই সমস্যা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনপদগুলো আরও পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে বলে মনে করেন করিয়ারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদ হোছাইন।
তিনি বলেন, ‘করিয়ারদিয়া পেকুয়ার বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। স্বাভাবিকভাবে নৌকায় পার হয়েই পৌঁছাতে হয় এই এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করিয়ারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ভোগান্তির কারনে অধিকাংশ শিক্ষক এখানে চাকরি করতে অনীহা দেখায়। এই বিদ্যালয়ে আসতে না আসতেই তদবির শুরু করে চলে যেতে। এতে সবসময় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকে। আর বর্তমানে পুরো উপজেলায় শিক্ষকের যে সংকট এর প্রভাবও পড়েছে।
ফলে বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছে তিনজন। শিক্ষকদের এ সংকট নিরসনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতিমালা পরিবর্তনে মত দিয়েছেন সিনিয়র শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হানিফ চৌধুরী।
তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার (খ) ধারা প্রযোজ্য হওয়াতে ভিন্ন উপজেলা, জেলা এমনকি অন্য বিভাগের মানুষও নিয়োগ প্রাপ্ত হয় এবং সহজ শর্তে তাঁরা নিজ এলাকায় পদায়িত হতে পারে। এই নীতিমালা পরিবর্তন না হলে হলে আজকের এই শিক্ষক সংকট নিরসন দুরূহ হবে। তিনি আরও বলেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ না করাতে অনেকে লিখিত পরিক্ষা পাশ করতে পারেনা? ফলে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।
শিক্ষার্থী থাকুক কিংবা না থাকুক ছয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় শিক্ষকের প্রয়োজন আছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছালামত উল্লাহ বলেন, সরকার দীর্ঘদিন নিয়োগ না দেওয়া এই শিক্ষক সংকটের অন্যতম কারন। তাছাড়া শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের যে ঘাটতি তা কমিয়ে আনতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করি। তবে আমরা আশা করি শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।
পাঠকের মতামত: