ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় ২ কোটি টাকা বাজেটের সড়কের কাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে প্রায় ২ কোটি টাকা বাজেটের বাইম্যাখালী-সিকদার পাড়া সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং! পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী থেকে সিকদার পাড়া পর্যন্ত ১২৫০ মিটার সড়ক নির্মাণে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ইতিমধ্যেই সড়কের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং! এ কারণে সম্পূর্ণ কার্পেটিং তুলে সড়কটি ফের নির্মাণের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, সড়কের কার্পেটিং কাজে সীমাহীন অনিয়ম হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে সড়কের কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়!

সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী থেকে সিকদার পাড়া পর্যন্ত ১২৫০ মিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। গত ৪/৫ মাস পূর্বে সড়কের কার্পেটিং ও অন্যান্য কাজ শুরু করে ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে সড়কের কাজটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যাদেশ পান বান্দরবান জেলা শহরের ইউটিং মারমা নামের এক ঠিকাদার। তবে ইউটিং মারমা সড়কের কাজ নিজে বাস্তবায়ন না করে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নিয়ে কাজটি বিক্রি করে দেন পারভেজ নামের চকরিয়ার এক ঠিকাদারকে। আর এদিকে চকরিয়ার ওই ব্যক্তি ইউটিং মারমার কাছ থেকে সাব কন্ট্রাকে কাজটি নিয়ে সড়কের কাজের শুরুতেই নানান অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন করছেন। ইতিমধ্যেই সড়কের বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সড়কে নিম্নমানের বিটুমিন, পাথর ও বালু ব্যবহারের কারণে কাপেটিং উঠে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজমগীর অভিযোগ করে বলেন, অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী সড়কের কাজ করেনি সাব টিকাদার পারভেজ। সামান্য বৃষ্টির পানিতে সড়কে সমস্যা হয়েছে। কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তিনি সড়কের
কাজে অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সড়কটি বাস্তবায়নে নিয়োজিত সাব ঠিকাদার চকরিয়ার পারভেজের কাছে এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। এটি সব জায়গায় হচ্ছে। শুধু আমার বেলায় নয়। সড়কের কাজে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না বলে তিনি দাবী করেন। সাব ঠিকাদারী নিয়ে সড়কের কাজ বাস্তবায়নের নিয়ম রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউটিং মারমার পক্ষ হয়ে তিনি কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। এক পর্যায়ে সড়কের অনিয়ম নিয়ে কোন ধরনের রিপোর্ট না করার জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে বিনীত অনুরোধ জানান সাব ঠিকাদার পারভেজ।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী গ্রামের কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানান, পেকুয়া এলজিইডি অফিসের দূর্নীতিবাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আয়াত উল্লাহ সড়ড়ের কাজে নিয়োজিত সাব ঠিকাদার চকরিয়ার পারভেজের সাথে কমিশনের বিনিময়ে আঁতাত করেছে। সড়কের কাজের তদারকীর দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আয়াত উল্লাহ কমিশনের বিনিময়ে ঠিকাদারকে কাজে অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়া এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আয়াত উল্লাহর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সড়কের কাজের অনিয়ম নিয়ে কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, কক্সবাজারের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, সড়কের অনিয়ম কোনভাবেই সহ্য করা হবেনা। কয়েকদিনের মধ্যেই সরেজমিনে পরিদর্শন করে সড়কের অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হলে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: