মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের ২৫টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় সম্প্রতি সময়ে জাতীয় ও স্থানীয়সহ একাধিক পত্রিকায় বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে উর্দ্ধতন প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
মগনামায় ২৫টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ করে সরকারী বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজেশ ছিল প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার! তবে স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিনের তৎপরতায় ২৫টি ঘরের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েও পার পায়নি ঠিকাদার।
সম্প্রতি সময়ে সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন সরেজমিনে পরিদর্শন করে মগনামায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ২৫টি ঘর তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করেন বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে। সংবাদটি প্রকাশের পর নজরে আসে জেলা প্রশাসনসহ উর্দ্ধতন প্রশাসনের। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এদিকে তদন্ত কমিটি পেকুয়ায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ খবরে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন গত কয়েকদিন ধরে রাতে দিনে সমানতালে বেশ তড়িগড়ি করেই অনিয়মের মাধ্যমে তৈরীকৃত ঘরগুলোতে ব্যবহৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী গোপনে সরিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ২৫টি ঘরের টিন খুলে নিয়ে নতুন ঠিন লাগানো হচ্ছে। ঘরগুলোর মেঝেতে ইট বিছিয়ে উপরে সিমেন্ট-বালি মিশ্রিত প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। গত কয়েক দিন ধরে উপজেলা প্রশাসন ঠিকাদারের মাধ্যমে ঘরগুলোর মেঝের সিমেন্ট-বালির প্রলেপ তুলে ফেলে সেখানে কংকর-বালি মিশ্রিত করে টেকসই ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। মগনামায় ২৫টি ঘর তৈরীতে দুর্নীতি ঢাকতে প্রশাসন কৃর্তৃক ঠিকাদারের মাধ্যমে তড়িগড়ি করে কাজ বাস্তবায়নের ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে নানা রহস্যের উদ্রেক হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: জাহিদুল ইসলামের কাছে আজ ৬আগস্ট সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, মগনামার ২৫টি মুজিববর্ষের ঘরে ঠিকাদার নিম্নমানের টিন ব্যবহার করায় তা খুলে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ভাল মানের টিন লাগানো হচ্ছে। আর ঘরের মেঝেতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় তাও তুলে সেখানে কংকরের ঢালাই দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা ও শরৎঘোনা এলাকায় ২৫টি ঘর নির্মাণে চলমান কাজে ঠিকাদার ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘর নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঠিকাদার চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি এলাকার ছাবের আহমদের পুত্র। অপরদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গত ৪/৫ মাস ধরে মগনামা ইউনিয়নের দুইটি গ্রামে ২৫টি মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে গেলেও অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এতোদিন রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২৫টি ঘরের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন বস্তুনিষ্ট ও তথ্য নিভর সংবাদ প্রকাশ করলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা গ্রামে ১৫টি ঘর মির্মাণ করা হয়েছে ভোলা খালের চরে। প্রবাহমান খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় গাইডওয়ালও দেওয়া হয়েছে। সাগরের সাথে সংযুক্ত ভোলা খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে নির্মিত ঘরগুলোর দক্ষিণ অংশে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ২৫টি ঘর নির্মাণে অতি নিম্নমানের কাঠ, কংকর, ইট, টিন, সিমেন্ট ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ঠিকাদার ছৈয়দ আলম বলেন, প্রতিটি ঘর তিনি ইউএনও’র কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা কন্ট্রাক করে তিনি নির্মাণ কাজ করে দিচ্ছেন। ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের বক্তব্য রাজি না হলেও এ নিয়ে আর নিউজ না করার জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে অনুরোধ জানান।
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনায় নির্মাণ কাজ চলমান থাকা ১০টি ঘর তৈরীর কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের টিন, ইট, বালি, কংকর, সিমেন্ট ব্যবহার করে ঘরগুলো তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও মগনামা ইউনিয়নে ঘর বিতরণের জন্য প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরীতেও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক উপকারভোগীদের বসবাসের জন্য ঘর ও জমি থাকলেও তাদের মুজিব বর্ষের ঘর দেওয়ার জন্য তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। যাহা কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা সরেজমিনে যাচাই-বাচাই করলে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলা উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, প্রবাহমান ভোলা খালের চরে মটকাভাঙ্গা গ্রামে মুজিববর্ষের ঘর বানানো হয়েছে। ফলে ভোলা খালের চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে ঘরগুলোর একাংশ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: