ঢাকা,রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি মহাসড়ক কেটে সাগর থেকে বালু উত্তোলনের পাইপ স্থাপন: নিরব প্রশাসন!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি মহাসড়ক কেটে সাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে থেকে অবৈধ উপায়ে সামুদ্রিক বালু উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছে সড়কের ঠিকাদারের মদদপুষ্ট স্থানীয় প্রভাবশালী বালুদস্যু সিন্ডিকেট! এর আগে ওই প্রভাবশালীরা মগনামা উপকূলীয় বনবিটের সংরক্ষিত জায়গার উপর দিয়ে পাইপ বসিয়ে পাউবোর বেড়িবাঁধও কেটে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। পাউবোর বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসালেও জড়িত প্রভাবশালী বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা এবার বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি মহাসড়কের মগনামা লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশ পয়েন্টে গতকাল ১৪ মার্চ দিবাগত রাতে স্ক্রেভেটার দিয়ে সরকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন মহাসড়ক কেটে বালু উত্তোলনের পাইপ স্থাপন করেছে। এভাবে রাতের আঁধারে সরকারী সড়ক কেটে পাইপ স্থাপনের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্মাণাধীন সড়কের ঠিকাদার স্থানীয় বালুদস্যু সিন্ডিকেটের সাথে গোপনে আঁতাত করে উপকূলীয় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা দখলে নিয়ে পাউবোর বেড়িবাঁধও কেটে পাইপ বসিয়েছে। এরপর তারা গতকাল ১৪ মার্চ দিবাগত রাতে মহাসড়কও কেটে পাইপ বসিয়েছে!

 গত মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারী পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপকূলীয় বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছিল। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের দুই সপ্তাহ পার না হতেই আবারো বালু উত্তোলনের জন্য আঁধারে সড়ক  কাটা হয়েছে। মগনামা ইউনিয়নের জনৈক জয়নাল ও আলী আকবর নামের দুই ব্যক্তি সড়কের ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের কন্ট্রাক নিয়ে পাউবোর বেড়িবাঁধ ও মহাসড়ক কেটে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের পাইপ স্থাপন করেছে বলে স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে।

উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা ও চনুয়া বনবিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী  জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী বালু উত্তোলনের জন্য বসানো পাইপসহ সরঞ্জামাদি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখন তারা আবারো বন বিভাগের জায়গার উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে সাগর থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে কালকের মধ্যেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বঙ্গোপসাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে থেকে বালু উত্তোলন করার কোন নিয়ম না থাকলেও মগনামার কয়েকজন বালুদস্যু ও সড়কের দূর্নীতিবাজ একজন ঠিকাদার একট্টা হয়ে বালু উত্তোলনের জন্য মগনামায় মহাসড়ক ও  বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছে। বালুদস্যু সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। তারা  স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করেনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজারের দুই উপজেলা পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার মধ্যবর্তী স্থান বঙ্গোপসাগরের মগনামা কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান। বন বিট কার্যালয়ের সামান্য উত্তর পার্শ্বে বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছে। বেড়িবাঁধ সরকারী স্থাপনা।  বেড়িবাঁধের ভিতরে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনাও রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব স্থাপনা চরম হুমকির মূখে পড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কার্যক্রম শুরু হলে নষ্ট হবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর ফলে ধ্বংস হবে সামুদ্রিক খনিজসম্পদ, সামুদ্রিক প্রাকৃতিক জীবসম্পদ, মৎস্য, চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন, কাঁকড়া, সি-উইড, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন-আবাসস্থল। জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের ইকো-সিস্টেমকে ক্ষতিসাধন করে রাষ্ট্রের সামুদ্রিক জলজ সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হবে। এছাড়া সমুদ্রতল, জলরাশি, জলস্রোত, বায়ু, সামুদ্রিক প্রবালপ্রাচীরও দূষিত হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) পেকুয়ার শাখা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো: গিয়াস উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বেড়িবাঁধ যারা কেটেছে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার রফিকুল ইসলাম জানান, মগনামার লঞ্চঘাটের উত্তর পার্শ্বে সাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী আরো জানায়,  ‘বন বিভাগের জায়গার উপর দিয়ে কাউকে সাগর থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত: