ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুইটি সুউচ্চ পাহাড় কেটে তার মাটি ডাম্পারে ভর্তি একটি নির্মাণাধীন ব্রীজের সংযোগ সড়কে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। পাহাড় কাটার সাথে জড়িত রয়েছে নির্মাণাধীন ব্রীজের তদারকী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কার্যাদেশপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার ও স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। গত এক মাস ধরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে তার মাটি ডাম্পারে ভর্তি করে ব্রীজের সংযোগ সড়কে ব্যবহার ও স্তুপ করে রাখা হলেও খবর নেই বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের! এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন পরিবেশবাদী লোকজনের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড়ের গুদিকাটা গ্রামে পাহাড় কাটার ঘটনাটি সংগঠিত হয়। গুদি কাটা চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের অধিন পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের টইটং বনবিটের আওতাধীন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টইটং ইউনিয়নের গুদিকাটা গ্রামের লাল মোহাম্মদের পুত্র সিরাজুল ইসলাম ও এজাহার মিয়ার পুত্র মোক্তারের ভোগ দখলে থাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুইটি সুউচ্চ পাহাড় স্থানীয় ইউপি সদস্য মনজুর আলম ও মনির চৌধুরী নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মোটা অংকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে এ দুই প্রভাবশালী স্ক্রেভেটার লাগিয়ে ওই দুইটি পাহাড় থেকে দিন রাত সমাসতালে মাটি কেটে ডাম্পারে ভর্তি করে টইট্ং ব্রীজের নির্মাণাধীন সংযোগ সড়কে ব্যবহারের জন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন।

স্থানীয় বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এনডিই সাগর বিল্ডার্স টইটং সীমান্ত ব্রীজের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। আর কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং চকরিয়া সাব সড়ক অফিস কাজটি তদারকী করছেন। ঠিকাদারের পক্ষে কাজটি দেখাভাল করছেন প্রজেক্ট ম্যানেজার সালাহ উদ্দিন। প্রায় ৫ কোটি টাকা বাজেটের উক্ত ব্রীজের নির্মাণাধীন কাজে তথা ব্রীজের দুই পাশে সংযোগ সড়কের জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন হওয়ায় সড়ক বিভাগের যোগসাজসে ঠিকাদারের নিযুক্ত প্রজেক্ট ম্যানেজার সালাহ উদ্দিন সংযোগ সড়কে মাটি সরবরাহের জন্য স্থানীয় টইটং ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য মনজুর আলম ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই মনির চৌধুরীর সাথে সাথে চুক্তি করে। এরপর তারা পাহাড়ের কথিত মালিক সিরাজুল ইসলাম ও মোক্তারের কাছ থেকে পাহাড়টি কাটার জন্য মৌখিকভাবে আরো একটি চুক্তি করে।

স্থানীয়রা জানান, মনজুর মেম্বার ও মনির চৌধুরী টইটং ব্রীজের সংযোগ সড়কে মাটি সরবরাহের কথা বলে সিরাজুল ইসলাম ও মোক্তারের দখলে থাকা রিজার্ভ পাহাড় কেটে পুরোটাই সাবাড় করেছে। প্রকাশ্যে স্কেভেটার দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করলেও মনজুর আলম ও মনিরের ভয়ে স্থানীয়রা কেউ মুখ খোলে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এমনকি যেখানে পাহাড় কাটা হয়েছে তার কাছাকাছি রয়েছে বন বিভাগের টইটং বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ও! স্থানীয় বন বিভাগের কর্তারা পাহাড় কাটার বিষয়টি অবগত হয়েও প্রভাবশালীদের ভয়ে পাহাড় কাটা বন্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

গত ২৩ মার্চ দুপুরে সরেজমিনে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দুইটি খাড়া পাহাড় স্ক্রেভেটার লাগিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। এসময় দেখা হয় পাহাড় কাটার সাথে জড়িত মনজুর মেম্বারের সাথে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মনজুর মেম্বার জানান, তিনি ও চেয়ারম্যান জাহেদের ছোট ভাই মনির চৌধুরী টইটং ব্রীজের সংযোগ সড়কে পাহাড়ের মাটি সরবরাহ করেছেন। সিরাজুল ইসলাম ও মোক্তার তাদের কাছে পাহাড় বিক্রি করেছেন। তাই তারা স্ক্রেভেটার দিয়ে মাটি কেটে নিয়েছেন। এক পর্যায়ে মনজুর মেম্বার এটা নিয়ে কোন ধরনের সংবাদ না করতে এ প্রতিবেদকের কাছে অনুরোধ করেন।

পাহাড় কাটার সাথে জড়িত মনির চৌধুরীর সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, তারা তো ব্যবসা করেছেন। পাহাড় তো তারা কাটেননি। পাহাড়ের মালিক তাদের কাছে মাটি বিক্রি করেছেন।

নির্মাণাধীন টইটং সীমান্ত ব্রীজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড় কেটে আনা মাটি সংযোগ সড়কে ব্যবহার করা হয়েছে এবং মাটির বিশাল একটি অংশ সংযোগ সড়কে ব্যবহারের জন্য ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক পরেই পাহাড় কেটে নিয়ে আসা এসব মাটি সংযোগ সড়কে ব্যবহার করা হবে।

সরকারী ব্রীজের কাজে পাহাড় কেটে এনে মাটি ব্যবহারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টইটং সীমান্ত ব্রীজের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের প্রজেক্ট ম্যানেজার সালাহ উদ্দিন জানান, তাদের কাছে মাটি সরবরাহ করেছে মনজুর মেম্বার ও মনি চৌধুরী। তারা কোত্থেকে কিভাবে মাটি সরবরাহ করেছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টইটং সীমান্ত ব্রীজের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের প্রজেক্ট ম্যানেজার, কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা সড়ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দুই দুই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট করে পাহাড় কেটে সাবাড় করেছেন।

টইটং বন বিট কর্মকর্তা জাবেদে এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাহাড় না কাটতে তিনি নিষেধ করেছিলেন। পাহাড় কাটার প্রসঙ্গটি তিনি তার উর্দ্ধতন বন রেঞ্জারকেও মৌখিকভাবে অবহিত করেছিলেন। এরপরেও প্রভাবশালীরা তার কথা শুনেনি। সরকারী সড়কের কাজে মাটির কথা বলে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে মাটি নিয়েছে বলে এ বন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।

কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঠিকাদারকে টইটং সীমান্ত ব্রীজটির কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তার দপ্তরের অধিনেই কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ব্রীজের সংযোগ সড়কের কাজে পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের বিষয়ে তাকে ইতিপূর্বে কেউ অভিযোগ করেনি। পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।

পাঠকের মতামত: