পেকুয়া প্রতিনিধি :: কাশেম, আলমগীর ও রবি আলম নামে তিন বখাটের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমানে আত্মহনন করা রেখা মণির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ও সার্কেল (চকরিয়া-পেকুয়া) তৌফিকুল আলম।
মঙ্গলবার বিকেলে সিনিয়র এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদারসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত করার পর নিহত রেখা মণির পরিবারে গিয়ে দ্রুত আইনী সহায়তার দেয়ার আশ্বাস দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম নিহত রেখা মণির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। রেখা মণি তার বিচার অবশ্যই পাবে। আপনাদের বিচলিত হওয়ার দরকার নাই।
চকরিয়া-পেকুয়া (সার্কেল) তৌফিকুল আলম নিহত রেখা মণির পরিবারকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন কোন অপরাধীকে ছাড় দেয়না। রেখা মণি যাদের কারণে আত্মহত্যা করেছে তারাও রেহায় পাবেনা।
জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে পিতা মাতার অবর্তমানে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউপির হাজির পাড়ার বাসা থেকে রেখা মণিকে জোরপূর্বক বের করে নিয়ে যায় বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মকসুদের ছেলে কাশেমের নেতৃত্বে রাজাখালী ইউপির মিয়ার পাড়ার আলমগীর ও রবি আলম। মৎস্যঘেরের একটি টংঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা কিশোরী মেয়েটির চিৎকারে এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করলেও বখাটের আলমগীরের ভাই জাহাঙ্গীর তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনাটি কিশোরীর ভাই রাশেল জানতে পেরে তার বোনকে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে আনতে গিয়ে হামলার শিকার হয়। একপর্যায়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার কিছুক্ষণ পর ভাইয়ের অগোচরে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর তার পিতা আইয়ুব আলী থানায় মামলা করতে গেলে ওসি (প্রশাসন) সাইফুর রহমান মজুমদারের অবর্তমানে পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার তড়িগড়ি করে একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে।
পিতা আইয়ুব আলীর অভিযোগ, তদন্ত কানন সরকার তার কাছ থেকে জোরপূর্বক সাক্ষর নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে। এমনকি ঘটনার পর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে এসআই নাজমুল তাদের কোন কথা শুনতে অপরাগত প্রকাশ করেন। এমনকি প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করতে গিয়ে এক নারী পুলিশ কিশোরীর লাশটি চেকআপ করতে গিয়ে গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণ দৃশ্যমান পান। বিষয়টি এসআই নাজমুলের দেয়া সুরতহাল রিপোর্টেও উঠে এসেছে।
এদিকে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হওয়ার পর পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত কানন সরকারকে এ বিষয়ে দায়ী করে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সার্কেলের। মঙ্গলবার সরেজমিন তদন্ত করে রেখা মণির আত্মহত্যার বিষয়ে তিন বখাটে জড়িত থাকার সত্যতা পান সরেজমিন পরিদর্শনকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। একই সাথে দ্রুত আইনী সহায়তার আশ্বাস পাওয়ায় নিহত রেখা মণির পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, এবিষয়ে নিহত রেখার পরিবারকে আইনী সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: