পেকুয়া প্রতিনিধি :: পেকুয়া উপজেলার কয়েকটি মূল ফটকের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষ্যাধিক বাসিন্দা। টানা ছয় দিনের ভারী বৃষ্টি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের মাতামুহুরি খালে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার সকালে কক্সবাজারের পেকুয়ায় পূর্ব মেহেরনামা (পহরচাঁদা মাদ্রাসা সংলগ্ন) ফাসের গুদাম এলাকার পৃথক দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের প্রায় ৮০ মিটার ও ৪৫ মিটার অংশ ভেঙ্গে যায়। ফলে পাহাড়ি ঢল ও মাতামুহুরি নদীর পানি সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা,বলির পাড়া,মোরারপাড়া সহ সৈকতপাড়ায় লোকালয় প্লাবিত হয়।
এছাড়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের লালজান পাড়ার স্লুইচগেট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের সাথে প্রবল বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লালজান পাড়া, রব্বত আলী পাড়া,আমিলা পাড়া,উলুডিয়া পাড়া, ছড়িঁপাড়াসহ, বকশিয়াঘোনার প্রায় আট হাজার মানুষ। সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশগুলো দিয়ে মাতামুহুরি খালের পানি ভয়াবহ ভাবে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ফলে উপচে পড়া স্হানে দ্রুত এ ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুহূর্তে পানির পরিমাণ বেড়ে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, ঘরবাড়ি,খামারসহ নানা অবকাঠামো তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। তুলনামূলক ভাবে নিম্নাঞ্চলের মানুষ তাঁদের গৃহপালিত পশুগুলো নিয়ে যাচ্ছে নিরাপদস্থানে।
এদিকে টানা বর্ষণে উপজেলার ৬০থেকে ৭০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবন সংগ্রামের কাছে হেরে পড়েছে। শিলখালী ইউনিয়নের হাজ্বীর ঘোনা এলাকার বেশিরভাগ মানুষের ঘরবাড়ি পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে ইউনিয়নের মুন্সিমুরা,চেপ্টামুরা মাঝেরঘোনা, জারুলবনিয়া,পেঠান মাতবর পাড়ারসহ তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.বাহাদুর শাহ বলেন, টানা বৃষ্টিতে কয়েকদিন ধরে মেহেরনামা, নন্দীরপাড়া, বিলহাসুরা, মইয়াদিয়া, সিরাদিয়া, মগকাটা ও বলির পাড়া এলাকায় পানি বেড়ে গিয়েছিলো।
এরমধ্যে সোমবার মেহেরনামার দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এক মহা দুর্যোগ দেখা দিয়েছে উক্ত এলাকায়। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পাশাপাশি এ দুর্যোগের কবলে পড়া মানুষদের শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোছাইন বলেন,পানিবন্দি মানুষদের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় তীব্র খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তাঁদের জন্য শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল রাজাখালী, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নেও টানা বর্ষণের প্রভাব পড়েছে। এই তিন ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজার মানুষ বর্তমানে পানির নিচেই জীবন যাপন করছে। এরমধ্যে রাজাখালীর লালজান পাড়া ও উজানটিয়ার পেকুয়ার চর এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। বলিরপাড়ার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন, মুরারপাড়ার জাকরিয়া বলেন, প্রতি বর্ষাতেই পানির নিচে চলে যায় আমাদের এলাকা। এরমধ্যে টানা বৃষ্টি হলেই পানি বেড়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন জীবনযাপন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
মুলত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাতে প্রতিবছর এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশগুলো পরিদর্শন করে এসেছি। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া মানুষদের আশ্রয়ণকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের কাছে শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত বাসিন্দাসের পাহাড়ধসের ব্যাপারে সতর্কতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আর এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে জরুরি সভার আহবান করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: