ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার রাজাখালীতে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গুলাগুলি: দেড় বছরের শিশুসহ ৩জন গুলিবিদ্ধ

ডডডডমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীতে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সন্ত্রাসী বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে দেড় বছর বয়সী এক শিশুসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের পেকুয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার জের ধরে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের টেকঘোনা পাড়া গ্রামে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের মধ্যে বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মূহুর্তে ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের মধ্যে ফের বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। এ নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে খবর পেয়ে পেকুয়া থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর) দেড়টার দিকে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের টেকঘোনাপাড়া এলাকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী রফিক বাহিনী ও আজম বাহিনীর মধ্যে গুলিগুলির ঘটনাটি ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন, ওই এলাকার মৃত.মাহমুদুল হকের ছেলে আইয়ুব আলী (৩৫), তার দেড় বছরের শিশু পুত্র মোহাম্মদ আবির ও একই এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে পেকুয়া জিএমসির নবম শ্রেণীর ছাত্র ইমরান (১৪)। তবে শিশু আবিরকে ওই দিন বিকেলে পেকুয়া হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আবিরের অবস্থা আশকাজনক। পেকুয়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে আইয়ুবের মাথায় গুলি লাগে। শিশু আবিরের পিঠে ও কপালে একাধিক ছররা গুলি লাগে। স্কুল ছাত্র ইমরানের পায়ে গুলি লাগে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী রফিক বাহিনীর অন্যতম সহযোগী নাছির উদ্দিন (৪২) কে আটক করে। স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার সাথে নাছিরেরও সম্পৃক্ত রয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রাজাখালী ইউনিনের টেকঘোনা পাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের ওরফে বদিয়ার ছেলে ইলিয়াস তার স্ত্রী বেবি আকতারের সাথে অভিমান এনে গত কয়েক তিন দিন পূর্বে তালাক দেয়। এনিয়ে স্থানীয় আহমদ ছফার ছেলে ও সন্ত্রাসী রফিক উদ্দিন বাহিনীর প্রধান রফিক ওই ইলিয়াছের স্ত্রী বেবি আকতারকে তালাকের একদিন পর স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনা মেনে নিতে পারেনি ইলিয়াছ। পরে ইলিয়াছ সন্ত্রাসী আজম বাহিনীর শরাপন্ন হয়ে রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকের বিরুদ্ধে নাশিল দেয়।

ঘটনার দিনে ইলিয়াসের সাথে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান রফিকের লোকজনের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তালাকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রফিক বাহিনীর লোকজন একজন আলেমকে এলাকায় এনে এর বিষয়ে ফরায়াজে সম্মত হন। ফতোয়ায় ওই আলেম তালাক হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত দেন। মূলত ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ওই ঘটনায় রফিক বাহিনী ও আজম বাহিনীর মধ্যে তুমুল বিরোধ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিনে দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমে আহমদ ছফার ছেলে সন্ত্রাসী রফিক, গুরামিয়ার, নেজাম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী লোক এলোপাতাড়ি গুলিছোড়ে। খবর পেয়ে ছৈয়দ মিয়ার পুত্র ও সন্ত্রাসী আজম বাহিনীর প্রধান আজম ও আব্দুল কাদেরের ছেলে ইলিয়াসসহ ১০/১৫জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রফিক বাহিনীকে মোকাবেলায় পাল্টা গুলি ছোড়ে। শুরু হয় দুই বাহিনীর মধ্যে গুলাগুলি। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী গুলাগুলির ঘটনায় দেড় বছরের শিশুসহ তিন জন গুলিবিদ্ধ হলেও সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের কোন ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের মধ্যে গুলাগুলির সময় আইয়ুব আলী তার দেড় বছরের শিশুপুত্র আবিরকে নিয়ে বাড়ির ছাদে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল। এ সময় হঠাৎ সন্ত্রাসী বাহিনীর ছোড়া কয়েকটি বুলেট এসে পিতা-পুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা আরো জানান, গত মঙ্গলবার রাতেও রাজাখালীর টেকঘোনা পাড়া গ্রামের ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়েছে।

অপরদিকে এদিন বিকেলে ফের দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় ও ভাংচুর হয়েছে। দফায় দফায় গুলি বর্ষনের ঘটনায় পুর্ব রাজাখালী টেকঘোনা ও পাশ্ববর্তী বারবাকিয়া ইউনিয়নের নোয়াখালী এলাকায় চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুঁইয়া জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা রেকর্ড় করা হবে। কোন সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন ওসি।

 

পাঠকের মতামত: