পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটংয়ের আবাদীঘোনা, খুনিয়াভিটা, বটতলি, ঝুম পাড়া, বারবাকিয়া পাহাড়িয়াখালী ও শিলখালীর জারুলবুনিয়া, সাপেরঘারাসহ আরো বেশ কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীরা আস্তানা গড়ে রাম রাজস্ব শুরু করেছে।
দীর্ঘবছর ধরে বসবাস করা অসহায় বসতিদের উচ্ছেদ করে তাদের বসতি জবর দখল, সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নিধন, অসহায় নারী পুরুষকে মারধর করে আহত করা, যখন তখন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও বিক্রি, মাদক বিকিকিনি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পাহাড় কেটে সাবাড়সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বহু মামলার আসামী এ সমস্ত সন্ত্রাসীরা। এমনকি বাঁশখালীর পুইছড়ি থেকে এসে টৈটং বড় ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্বীকৃত অপরাধীরা।
পেকুয়া ও বাঁশখালীর সন্ত্রাসীদের নামে ডজন ডজন মামলা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকলে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অপরাধ সংগঠিত করে যাচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টৈটংয়ের সদ্য অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপির নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধীদের ভাড়া করে ভোটকেন্দ্র দখল ও অপরাধ সংগঠিত করে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি করার সুযোগ তৈরির করার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী লোক। দা-বাহিনীর নাসিরসহ আরো বেশ কয়েকজন অপরাধী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলে তাদের অবর্তমানে পুইছড়ি এলাকার পুইন্যা ডাকাত, তার ছেলে জসিমকে দিয়ে টৈটংয়ের বটতলি ও ঝুম পাড়ায় অপরাধ সংগঠিত করাচ্ছে বহু মামলার আসামী আবছারের ছেলে আনিস ও মৃত নুরুল কাদেরের ছেলে আবদুল হামিদ।
ইতোমধ্যে টৈটংয়ে এসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে জয়নালের স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে মিন্টু নামে এক ডাকাতকে গণপিটুনী দিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও ঝুম পাড়ায় অপরাধে জড়িত রয়েছে মৃত লাল ইয়াকুবের ছেলে প্রায় ডজন মামলার আসামী জমির হোসেন, মৃত বদিউল আলমের ছেলে জাবের হোসেন। মালঘারায় অপরাধে নেতৃত্বে দিচ্ছে ইজ্জত আলীর ছেলে মোঃ এজাহার, খুনিয়াভিটায় মোঃ ইসমাঈল, কারাগারে থেকে অপরাধের নেতৃত্ব দিচ্ছে রহিম ও খোকন নামে দুইজন।
চেপ্টামোড়ার চম্পাইয়্যা সদ্য জেল থেকে বের আবারো অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে। এছাড়াও আলেকদিয়াকাটা এলাকার বাসিন্দা মৃত মোঃ হোছনের ছেলে মোঃ আলম ইয়াবা ও অস্ত্র বিক্রির মূলহোতা বলে এলাকায় অধিক পরিচিত। পন্ডিত পাড়ার মওলা ও আনিস এ দুইজনের ভয়ে আতংকে থাকে নিরহ লোকজন। তাদের কারণে টৈটং এলাকায় প্রতিদিন কোন না কোন ঘটনা ঘটেই চলছে। এদিকে বারবাকিয়ার পাহাড়িখালী থেকে টৈটংয়ের আবাদীঘোনায় গিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে জাহাঙ্গীর আলম ও তার বাহিনীর সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন। তাদের বাহিনীর প্রতিজনের নামে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০টা করে মামলা। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অহরহ অসহায় মানুষ।
শিলখালীর সাপেরঘারা এলাকায় বিগত ১বছর আগে বিয়ের তিনদিনের মাথায় ডাকাতের গুলিতে নিহত হয় প্রবাসী নুরুন্নবী। এ ঘটনায় জামাল ও কাইছার নামে দুই ডাকাত স্থানীয় জনগণের গণপিটুনীতে নিহত হলেও তাদের অন্য সদস্যরা এখনো পাহাড়ে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নিত্য চুরি ছিনতাই আর হানাহানির মত ঘটনা ঘটেই চলছে।
এছাড়াও পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীর বদিউদ্দিন পাড়া, বামুলা পাড়া, মগনামার কাজি মার্কেট, আফজালিয়া পাড়া, উজানটিয়ার গোদার পাড়, বারবাকিয়ার জালিয়াকাটা, পেকুয়া সদরের সিরাদিয়া, বটতলি পাড়া, বাইম্যাখালী এলাকার বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। বড় ধরণের রক্তপাতের মত ঘটনা চলমান রয়েছে। এমনকি পেকুয়া থানা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা ও মদের চালান পেকুয়া-টৈটং সড়ক পার হয়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, লোহাগাড়া ও পটিয়ায় গিয়ে ধরা পড়ে। ওখানেই আটক হয় ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীরা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এ সমস্ত অপরাধীরা স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও অল্প সংখ্যক সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠছেন। মাদক বিকিকিনি এখন প্রকাশ্যে। পেকুয়া থানা সংশ্লিষ্ট চৌমুহনী এলাকায় প্রতিদিন সংগঠিত হচ্ছে কোন না কোন চুরির ঘটনা। মোটর সাইকেল, টমটম গাড়ি ও অটোরিক্সা চুরি নিত্যব্যাপার। এছাড়াও এক শ্রেণির কিশোর গ্যাং প্রতিদিন ভাড়ায় জবর দখলের ঘটনায় ভাড়াটি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছেন।
এক সময় থানা প্রশাসন মাদক ও চুরির বিষয়ে খুব কঠোর অবস্থানে থাকলেও পুলিশের ব্যাপক রদবদলে অভিযানে স্থীতিশীলতা নেমে এসেছে।
টৈটং ইউপির ঝমুপাড়া এলাকার জয়নাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাঁশখালীর পুইন্যা ডাকাত, মিন্টু ডাকাতসহ আরো বেশ কয়েকজন আমার বাড়িতে প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ হামলা করে। আমার স্ত্রীর হাত কেড়ে নেয়। ওই সময় স্থানীয়রা মিন্টু ডাকাতকে গণপিটুনী দিয়ে নিহত করলেও পুইন্যা ডাকাতসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে টৈটংয়ের বেশ কয়েকজন। আমরা টৈটংবাসীর তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তারা অপরাধ সংগঠিত করলেও মামলাগুলো হয় আমাদের বিপক্ষে।
টৈটংয়ের আবাদীঘোনা এলাকার রহিমদাদ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বনের রাজা জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারীদের নামে হত্যা, ধর্ষণ, চাদাবাজি, বন মামলাসহ ৩৭টি মামলা চলমান রয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি হারা হয়েছি। মামলায় তার নামে বেশ কয়েকটি পরোয়ানা থাকলেও কেন গ্রেপ্তার হয়না তা আমাদের বোধগম্য হয়না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তারী পরোয়ানা আসামীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। শীর্ষ অপরাধীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা। পেকুয়ার আইনশৃঙ্খলা যাতে স্বাভাবিক থাকে আমরা সেই চেষ্টায় সার্বক্ষনিক থাকি।
পাঠকের মতামত: