আব্বাস সিদ্দিকী, কুতুবদিয়া ::
কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্টে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ডুকে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। গত বুধবার থেকে টানা ২য় দিনেও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে উপজেলার প্লাবিত ভয়াবহ ভাঙ্গন পয়েন্ট সমূহ হচ্ছে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের‘পশ্চিম চরধূরুং, মিয়াজীর পাড়া, দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের পুরাতন বাতিঘর পাড়া, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিন্দাপাড়া, মতিরবাপের পাড়া, বড় মৌলভী পাড়া, মলমচর, বড়ঘোপ ইউনিয়নের উত্তর বড়ঘোপ, ঝাউতলা পাড়া, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কিরণ পাড়া, হায়দার পাড়া, কাজীর পাড়া, আনিচের ডেইল, বায়ু বিদ্যুৎ ও লেমশীখালী ইউনিয়নের দরবার জেটির দক্ষিণ এলাকাসহ ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঐসব এলাকার নিন্মাঞ্চলের কয়েক’শ বাড়িঘর, মৎস্যক্ষেত ও ফসলের জমি জোয়ারে তলিয়ে গেছে। পানি বন্দি ঘরবাড়ির লোকজন পাশ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে বৃহষ্পতিবার (২৭মে) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন কক্সবাজার-২ কুতুবদিয়া মহেশখালী আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আ’লীগ সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) জাহিদ ইকবাল সহ সমন্বিত একটি দল৷ সাংসদ কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের সাথে কথা বলে জানতে চেয়েছেন সমস্যা ও চাহিদার কথা৷ পরিদর্শন শেষে দুর্গত মানুষের দ্রুত সহায়তা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন হল রুমে এক জরুরী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভায় বক্তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরী পদক্ষেপের উপর মতামত প্রকাশ করেন৷
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, চাই বেড়িবাঁধ, দ্রুত সময়ের মধ্যে কিভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যায় সেটাই চেষ্টা চালানোর জন্য বললেন পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর উদ্দেশ্যে৷ তিনি আরো বলেন বেড়িবাঁধের প্রয়োজনে আমার যখন যেখানে যেতে হয় আমি অবশ্যই উপস্থিত হব৷ সরকারি কাজে বালি ব্যবহারের জন্য যদি বাইরে থেকে বালি সংগ্রহ করার বাজেট ধার্য্য থাকে বা উল্লেখ থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বাইরের বালি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি৷ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর হওয়ার কারণে আশেপাশের এলাকা গুলোর গুরুত্ব বাড়বে এবং কুতুবদিয়া হবে তাদের মধ্যে অন্যতম৷
জেলা আ’লীগ সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কি করা যায় আর দীর্ঘমেয়াদী কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ মুখে বলা যত সহজ আসলে বাস্তবে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা খুবই কঠিন ব্যাপার৷ আমরা আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম তবে এত বড় দুর্যোগের জন্য নয়৷ আগত বর্ষার প্লাবণ ঠেকাতে জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় যারা সার্বিক সহায়তা করেছেন তাঁদের সকলকে তিনি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷ যার যেটা দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালনের জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ জানান৷
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদ ইকবাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, উন্নয়ন করতে চাইলে কোন সমস্যাই সমস্যা না, চাই দৃঢ় মনোবল ও সুন্দর পরিকল্পনা৷ সত্যিকার অর্থে সুন্দর ও সমন্বিত প্রকল্প উপস্থাপন করতে পারলে অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সেটা বাস্তবায়ন করবেন বলে আশাবাদী৷ দুর্গত মানুষের জন্য যতটুকু করা সম্ভব সেটা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে বলে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেন৷
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ুন হায়দার, জেলা আ’লীগ সদস্য শফিউল আলম, আলী আকবর ডেইল ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর সিকদার, লেমশিখালী ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ, দক্ষিণ ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী, বড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদউদ্দিন ছোটন, উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী, উঃ পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আইয়ুব আলী, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা লেলিন দে, বন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন,কৃষি কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য উপস্হাপন করেন। সভায় উপজেলা আ’লীগের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত: