ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পিলার দেখেই কাটল ১৫ বছর !

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুটি সেতু নির্মাণ করতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর নির্মিত দুই পিলার দেখেই ১৫ বছর পার! ফলে করিয়ারদিয়া ডিজিটাল যুগেও রয়ে গেছে এনালগ আমলের মতো বিচ্ছিন্ন। এতে দশ হাজারের বেশি মানুষের কাকুতি ও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘করিয়ারদিয়া’। নদীবেষ্টিত এ ভূখন্ডে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। মাতামুহুরি নদীর দুটি প্রশাখা করিয়ারদিয়া বেষ্টিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। করিয়ারদিয়ার এক পাড়ে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন, অপর পাড়ে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়ন।

একই সময় মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সঙ্গে উজানটিয়া ইউনিয়নের সংযোগে উজানটিয়া নদীর ওপর ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে সময় সেতুটির আটটি পিলার (মূল স্তম্ভ) নির্মিত হয়। কিন্তু এক-এগারোর পর সব থমকে যায়। সেই থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। দুটি সেতুরই কাজ পায় প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী গিয়াস উদ্দিনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চকোরী কনস্ট্রাকশন। কিন্তু এক-এগারোর পর ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেলে সেতু দুটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে জোট সরকারের সময় শুরু হওয়া এ প্রকল্প আওয়ামী লীগ সরকারও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন।

সরেজমিন দেখা যায়, করিমদাদ মিয়ার ঘাট এলাকায় সেতু উদ্বোধনের নামফলকটি ক্ষয়ে গেছে। নদীর পানির স্রোতে তলদেশ থেকে নির্মাণ করা পিলারগুলো বেঁকে যাচ্ছে। পিলার ভেঙে প্রায় অর্ধেক অংশের লোহার রড কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেতুর মূল্যবান নির্মাণসামগ্রীও চুরি হয়েছে ।

করিয়ারদিয়া এলাকার বাসিন্দা জিয়াবুল হক জিকু চকরিয়া নিউজকে বলেন, সেতু দুটি নির্মিত হলে চিংড়ি ও লবণ পরিবহনের খরচ কমবে। এতে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বর্তমানে এ এলাকার বাসিন্দাদের কাদা মাড়িয়ে নৌকায় চড়ে নদী পার হতে হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, এ দুটি সেতু নির্মাণকাজ শেষ করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে একটি দল এসে পরিদর্শন করে গিয়েছিল। তারা সেতু দুটি শিগগিরই নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সাত বছরেও তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তবে সেতুটি নির্মিত হলে উপকূলীয় অবহেলিত অঞ্চলগুলোর মাঝে উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে।

পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) জাহেদুল আলম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, সেতু দুটির নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদার কাজ না করায় কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের সেতু নির্মাণ প্রকল্পে এখন টাকার সংকট রয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এ প্রকল্পের ডিপিটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাস হলেই ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

পাঠকের মতামত: