অনলাইন নিউজ ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একাত্তরের ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পর এখন পাকিস্তান মিথ্যা তথ্য দিয়ে বই ছাপিয়ে তাদের কৃতকর্ম উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এ নিয়ে মিথ্যাচার সম্বলিত বই ছাপিয়ে তা আবার বাংলাদেশের কাছে পাঠানোর দুঃসাহস পাকিস্তান পায় কীভাবে? আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাই। দেশের পক্ষ থেকে দ্রুতই পাকিস্তানের কাছে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাব। বুধবার সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি দেশবাসীকেও পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের এ ধরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারা পরাজিত শক্তিদের মদত দিচ্ছে তাদের সম্পর্কেও দেশের জনগণকে জানা উচিত। খালেদা জিয়া যেভাবে একাত্তরে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিদেশী প্রভূদের (পাকিস্তান) সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন হচ্ছে মিথ্যাচার করে বই ছাপিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো। অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টির তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদতে পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদের লেখা ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড’ বই লিখে তাতে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক এদেশের গণহত্যাকে মুক্তিবাহিনীর হত্যাকা- হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। বইটি সংসদে দেখিয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবাদ জানান এবং ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানান। এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি প্রসঙ্গে সভাপতির আসনে থাকা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সকল সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যেই একজন এমপি সংসদ সচিবালয়ে একটি নোটিশ জমা দিয়েছেন। ওই নোটিশ এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী তা গ্রহণ করে অগ্নিঝরা মার্চের যেকোন একটি দিনে এ নিয়ে সাধারণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। তোফায়েল আহমদের দাবির প্রতি একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কারো হুইসেলে আমাদের স্বাধীনতা আসেনি। একাত্তরে জেনারেল ইয়াহিয়া বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা সবারই জানা। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনার শুধু দেশেই নয়, পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক বহু দেশেই তথ্য রয়েছে। এখন পাকিস্তান তাদের যে এই কৃতকর্ম, যে গণহত্যা চালিয়েছিল। সেগুলোকে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের জন্য এটি লজ্জার বিষয়। এমন বই লেখার এবং তা বাংলাদেশে পাঠানোর সাহস তারা (পাকিস্তান) কোথা থেকে পেল।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী যার স্বামী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সেই নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়নি! যে কথাটি দেশের প্রত্যেকটি মানুষ জানে ও স্বীকার করেন। আর সেখানে সেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গণহত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই বিদেশী প্রভুদের সুযোগ করে দেয়া- এটাই বোধহয় তাঁর (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা ছিল। তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি- পাকিস্তান বই ছাপিয়ে সেটা আবার বাংলাদেশে পাঠায়। এত বড় দুঃসাহস তাদের কোথা থেকে আসলো সেটাই আমাদের প্রশ্ন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন। তাদের (পাকিস্তান) ধারণা ছিল বাংলাদেশ বোধহয় স্বাধীন হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। সেই ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারা ঘটিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরাজিত শত্রুরা ভেবেছিল বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। বাংলাদেশ আজ সফল। সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। এটাই বোধহয় পাকিস্তানি জান্তাদের গাত্রদাহ। এটাই তাদের জ্বালা। এটাই তারা সহ্য করতে পারছে না। যে কারণে আজকে তারা মিথ্যাচার করছে। আজকে তারা এই গণহত্যাকে চাপাতে চাচ্ছে মুক্তিবাহিনীর উপর। এটা কোনদিনেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তান যে গণহত্যা চালিয়ে অপরাধ করেছে তার জন্য তাদেরকে বারবার বলা হয়েছে, তোমরা মাফ চাও। তারা মাফ তো চায়নি, উল্টো এখন তাদের অপকর্মকের দায়ভার আমাদের মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এটা বাংলাদেশের কাছে কোনদিন গ্রহণযোগ্য না। এটা কখনো মেনে নেয়া হবে না। পাকিস্তানের কাছে এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান এমন ধরণের বই তৈরির কারণে তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই। আমাদের দেশ থেকে কারা তাদের মদত দেয়- এটাও দেশবাসীর জানা উচিত।
পাঠকের মতামত: