ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সাংবাদিক সম্মেলনে মুহম্মদ নুরুল ইসলাম

নব্য দোসরদের কারণে সাংবাদিকরা কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও ইংরেজি দৈনিক নিউএজ প্রতিনিধি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেছেন, নব্য দোসরদের কারণে সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের স্বার্থরক্ষা করার জন্য, বঞ্চিত সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বঞ্চিত সাংবাদিকদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।তিনি বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। অথচ আজ কক্সবাজারে কিছু অসাধু সুবিধাভোগী স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের দোসরের কারণে কক্সবাজারের সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাচ্ছে না। কূট কৌশলে বঞ্চিত সাংবাদিকদেরকে প্রেসক্লাব থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কিছু তাবেদার, বর্ণচোরা, মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকদের সমর্থন নিয়ে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধনের নামে ক্লাবকে পৈত্রিক তালুকে পরিণত করা হচ্ছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগকারী সিনিয়র সাংবাদিক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন,
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যকরী কমিটি জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল। রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে আবারও সেই পুরোনো শকুনেরা উড়ে বেড়াচ্ছে প্রেসক্লাবের আকাশে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনও দেশের প্রতিটি সেক্টরে রয়ে গেছে সেই চিরাচেনা বৈষম্য। সেই বৈষম্যের কারণে প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটি থেকে আমি পদত্যাগ করেছি নিশ্চয়ই সাংবাদিক মহল জানেন।

ক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধন করার জন্য অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় আমাকে আহবায়ক করে গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির কোনো মিটিং আয়োজন না করে ক্লাবের কমিটি গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতিকে পদ দলিত করে তল্পিবাহকদের সমর্থন নিয়ে গঠনতন্ত্রকে সংশোধন করে ক্লাবকে পৈত্রিক তালুকে পরিণত করা হচ্ছে। যা অগঠনতান্ত্রিক।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য তিনি আরও বলেন,
গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের জন্য এক সপ্তাহ আগে সদস্যদেরকে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু ১৫ তারিখের বিশেষ সাধারণ সভার নোটিশ বিলি করা হয়েছে ২৪ ঘন্টা আগে ১৪ ডিসেম্বর। নোটিশ বইয়ে তার প্রমাণ রয়েছে। ফলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভা অবৈধ, বিশেষ সাধারণ সভায় নেওয়া যাবতীয় সিদ্ধান্তই অবৈধ।

প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন সদস্য পদ পেতে হলে দরখাস্ত করতে হবে। গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী সে সব দরখাস্ত যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে যাচাই-বাচাই করার মাধ্যমে কার্যকরী পরিষদের সাংবাদিকদের তালিকা জমা দেবেন। কার্যকরী পরিষদের দায়িত্ব সে সব সদস্যদের সদস্য পদ দেওয়া। নতুন করে আবার যাচাই-বাছাই করার দরকার নেই। কার্যকরী পরিষদকে সদস্যদের আবেদন যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন হলে এই তথাকথিত যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করার দরকার কি?

ক্লাবের কার্যকরী কমিটি বিগত অক্টোবর মাসে যাচাই-বাছাই কমিটি বাছাই করে ১৭জন নতুন সদস্যের তালিকা কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। কমিটিতে ১৭জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা উত্থাপন না করে সভাপতি মাত্র ৯জনের নাম উল্লেখ করে সদস্য পদ প্রদান করেন। অবশিষ্ট ৮জনের নাম পর্যন্ত সভাপতি মহোদয় মাসিক মিটিং-এ উত্থাপন করেন নি। কথা ছিলো পরবর্তী মিটিং এ অবশিষ্ট সদস্যদের নামের তালিকা উত্থাপন করা হবে এবং তাদের সদস্যপদ প্রদান করা হবে। কিন্তু বিগত ৬ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মাসিক মিটিং-এ সভাপতি সাহেব সেই তালিকা আর উত্থাপনই করেন নি। বৈষম্যের কারনে উক্ত ১৭জন সাংবাদিক দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করলেও প্রেসক্লাবের ফ্যাসিস্টদের কারণে সদস্যপদ পায়নি। বর্তমান কমিটিও হাটছে সেই পথে। এটা স্পষ্ট বৈষম্য। এই বৈষম্যকে মেনে নেওয়া যায় না।

সংবাদ সম্মেলনে মুহম্মদ নুরুল ইসলাম আরও বলেন,
যেখানে সংখ্যা গরিষ্টতার জোরে সব কিছু করা যায়। শেখ হাসিনাও সংখ্যা গরিষ্টতার জোরে ফ্যাসিস্ট হয়েছে, হয়েছে স্বৈরাচার, হয়েছে কর্তৃত্ববাদী। বর্তমানে ক্লাবের কমিটি জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে, নিজেদের সুবিধা আদায়ের তা করে যাচ্ছে। প্রেসক্লাব পৈত্রিক সম্পত্তি নয়!
কক্সবাজার প্রেসক্লাব একটি পেশাদারদের ক্লাব। কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। ক্লাবের নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ ক্লাবকে ভলনটারি সার্ভিস দিয়ে থাকে। অথচ বর্তমান কমিটি ক্লাবের অর্থ লোপাটের জন্য প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বিগত ৪৮ বছরের ইতিহাস ব্রেক করে মিটিং ভাতা চালু করেছে। যা খুবই গর্হিত। ক্লাবের অর্থ ক্লাবের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের। এটা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়।

সদ্য পদত্যাগকারী সিনিয়র সাংবাদিক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের মনে রাখতে হবে, যে সব অগঠনতান্ত্রিক কর্মকান্ড বর্তমান কমিটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তার দায়ভার একদিন নয় একদিন নিতে হবে। হয়তো সেই দিন বেশি দূরে নয়।

তার ভাষায়, শেখ হাসিনার দেখানে পথেই হাটছে বর্তমান কমিটি। পকেট নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিনের ভোট রাতে নিয়ে ক্লাবের কমিটি গঠন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। একজন সচেতন সাংবাদিক হিসেবে এটাকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নিচ্ছি পারছি না।

গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র – জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের জন্য সমবেদনা জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিকস, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: