অনলাইন ডেস্ক ::
বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকান্ডের তদন্ত দাবি করে বিএনপি বলছে, দেশে বন্দুক যুদ্ধের নামে মারণযজ্ঞ চলছে। চলছে মানুষ হত্যার হিড়িক। সেইসাথে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিজ দলের লোকদের পকেট ভারী করতেই উন্নয়নের নামে সড়ক সংস্কার প্রকল্প নেতা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের বিশাল সম্পর্ক আছে। তার কথা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা গভীর ষড়যন্ত্র। এই বক্তব্য জবরদস্তিমূলক একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিতবহ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে ক’টি আসনে দাঁড়িয়েছেন তিনি কখনোই সেই নির্বাচনে পরাজিত হননি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। সেজন্য বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রীর এতো অসুয়া, এতো বিদ্বেষ। আর এজন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে এতো ষড়যন্ত্র। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানেই জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক, খালেদা জিয়া মানেই বিএনপি ও গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সাথে কখনো প্রতারণা করেননি। জনগণের প্রতি যখন যে ওয়াদা করেছেন সেটি পালন করেছেন নির্দ্বিধায়। প্রদত্ত অঙ্গীকারের কখনো বরখেলাপ করেননি, কিন্তু পদে পদে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন স্বৈরাচারের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পাওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কী ভুলে গেছেন ৮৬ এর নির্বাচনের কথা, ১০ টাকা কেজি চালের কথা, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা? আমরা কাউকে মাইনাস করতে চাই না, কিন্তু যারা অন্যকে মাইনাস করতে চায় তারা প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যায়। সুতরাং আইন আদালতসহ সবকিছু কব্জা করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে সাজা দিয়ে আপনাদের ক্ষমতার ঝাড়বাতির রোসনাই আর বেশি দিন থাকবে না। এবারে আপনাদের পতনের বিষণ্ন রাগিনী বাজতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে। খালেদা জিয়াবিহীন কোনো জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই মুহূর্তে বিএনপির ইশতেহার হচ্ছে- দেশনেত্রীর মুক্তি, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া এবং দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। আপনার বক্তব্যে পরিষ্কর হয়ে গেছে- বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাই আপনাদের ভয়, আর সেজন্যই আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে মিথ্যা তথ্যের ওপর সাজানো মামলায় তাকে কারাবন্দী করে রেখেছেন, জামিনযোগ্য মামলায়ও আপনাদের নিষেধের কারণেই জামিন পাচ্ছেন না তিনি। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেলেও তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। দেশনেত্রীকে বন্দী করে ৫ জানুয়ারিমার্কা একতরফা নির্বাচনের খায়েশ আপনাদের আর পূরণ হবে না। জনগণ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আপনাদের সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে।
রিজভী বলেন, সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধের নামে মারণযজ্ঞ চলছে। গত তিন দিনে চার জেলায় বিচারবহির্ভূত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৭ জন। এই মাসে যেন পোকামাকড়ের মতো বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে। গতরাতেও বরিশালে সাদা পোশাকের পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের নামে দু’জন নিহত হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার উদ্বেগ জানালেও তাতে সরকারের টনক নড়ছে না। গত কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- বর্তমানে দেশে যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যার নামে কিলিং প্র্যাকটিস করছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যার মূল উদ্দেশ্য দেশকে স্থায়ী দু:শাসনের বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে ফেলা, আর সেজন্য জনগণকে আতঙ্কিত করে রাখা। তারা যেন যেন ভোগ-লালসায় অস্থির থাকা এই অবৈধ সরকারের আগামী একতরফা নির্বাচনের নীল নকশার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহসী না হয়। আর এজন্য সরকার বিনা বিচারে হত্যার দন্ডাজ্ঞা ধরিয়ে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। আমি অবিলম্বে বন্দুক যুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই সরকারের আমলে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভূত হত্যার তদন্ত দাবি করছি।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, পবিত্র মাহে রমজানেও দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি চলছে গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট। গ্যাস সংকটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চুলা জ্বলছে না, ফলে সেহেরী ও ইফতারী তৈরী করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানি সংকট। আর এ কারণে মানুষ রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ওজু কিংবা গোসলের পানিও পাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে, হাঁড়ি পাতিল নিয়ে মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। গ্রামে গ্রামে চলছে ভয়াবহ বিদ্যূৎ বিপর্যয়। সেখানে এখন বিদ্যূৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। এমনকি ইফতার, সেহেরী ও তারাবীর নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার সরকারি ঘোষণা জনগণের সঙ্গে খাঁটি প্রহসন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে তুবড়ী ছোটানো উন্নয়ন সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে। আওয়ামী সরকার উন্নয়ন প্রতিবন্ধী। এখন এদেশে প্রকৃত উন্নয়ন দুরে থাকা মানুষের ন্যুনতম নাগরিক সেবাটুকুও ধ্বংস হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- ঈদের আগেই সারাদেশের সড়ক সংস্কার করা হবে। মূলত: ঈদের আগে ক্ষমতাসীন লোকজনের পকেট ভারী করতেই এই সংস্কার প্রকল্প। যারা সারা বছর মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে রাখে তারা কোনো আরব্য রজনীর দৈত্যকে দিয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে সব রাস্তাঘাট মেরামত করে ফেলবেন সেটি কারো উপলব্ধিতে আসে না। এটি যোগাযোগ মন্ত্রীর বাকেয়াস ছাড়া কিছুই না।
পাঠকের মতামত: