ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষকদের বেতন বকেয়া ১০ কোটি টাকা

দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ

স্বামী-স্ত্র চেক স্বাক্ষরকারী হিসেবে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছে এই কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার জেলার বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সিটি কলেজ। কিন্তু দীর্ঘদিনে কলেজেটি একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষের স্ত্রী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিসেস এথিন রাখাইনের যৌথ স্বাক্ষরে কলেজে দীর্ঘদিনে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে কলেজের সাধারণ শিক্ষকদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ মাত্র ১০ কোটি টাকা। কিন্তু মজার ব‍্যাপার হচ্ছে অধ‍্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কোন বেতন বকেয়া নেই। এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের বেতনও অধ্যক্ষ নয়-ছয় করেছেন বলেই দিনে দিনে বকেয়া টাকার পরিমাণ ১০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন অধ্যক্ষ নিজের স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে রেখে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেক স্বাক্ষরকারী স্বামী-স্ত্রী আছে কিনা জানা নেই, তবে কক্সবাজার সিটি কলেজ সেই দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। ফলে কলেজে দুর্নীতি করতে আর আটকায় কে? আর দেখারই বা কে আছে? নিজের স্ত্রীকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পেয়ে অধ্যক্ষ এতই বেপরোয়া হয়ে গেছেন জাল সনদ নিয়ে কলেজের শিক্ষক নিয়োগ করতেও তাকে কেউ আটকাতে পারেনি। এমন কি নতুন নতুন বিভাগ চালু করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন দেদারছে।
অধ্যক্ষ ক্য থিং অং কয়েক বছর আগে কলেজে নাট্যকলা নামের একটি বিভাগ চালু করেছেন। সেই নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক আছেন ৭জন। আর সেই বিভাগে নিয়মিত-অনিয়মিত ছাত্র আছে মাত্র ৭জন। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ৭জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক কতো টাকাই বা আয় হতে পারে বিবেকবান মানুষ সহজেই অনুমান করতে পারেন। জানা গেছে, ৭জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মাসিক টিউশন ফি আদায় হয়। কিন্তু ৭জন শিক্ষককে মাসিক প্রায় দুই লাখ টাকা বেতন দিতে হয়। উক্ত শিক্ষকদের বাৎসরিক দুটি ফেস্টিভল বোনাস দিলে টাকার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ৭জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি বিভাগ চালু করার কি নেহায়েত প্রয়োজন ছিলো? বর্তমানে কলেজে নাট্যকলা বিভাগসহ বিভাগ আছে ১৭টি।

অধ্যক্ষ ক্য থিং অং একই সাথে আরো কয়েকটি বিভাগ চালু করেছেন। আর সেইগুলো হচ্ছে পরিসংখ্যান বিভাগ, বায়ো ক্যামিস্ট্রি বিভাগসহ আরো কয়েকটি বিভাগ।
বর্তমান অধ্যক্ষ রামু কলেজ থেকে কক্সবাজার সিটি কলেজে এসে বিশেষ আশীর্বাদে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। একজন কলেজ শিক্ষক অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার দরকার। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ ক্য থিং অং এর সেই অভিজ্ঞতা ছিলো না। তিনি রামু কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন ১৯৮৯ সালের সেপ্টম্বর মাসে। রামু কলেজে তিনি শিক্ষকতা করেছেন মাত্র ১০ বছর ৫ মাস। প্রশ্ন উঠেছে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও তাঁকে কিসের বদৌলতে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ নেওয়া হয়েছিলো? সেই উত্তরও পাওয়া গেছে। সেই সময় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যক্ষ ক্য থিং অং এর স্ত্রী মিসেস এথিন রাখাইন এম পি।
ক্য থিং অং কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কয়েক বছর পরেই ২০০৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী মিসেস এথিন রাখাইনকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়। মিসেস এথিন রাখাইন ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে টানা ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। যেখানে স্বামী কলেজের অধ্যক্ষ আর স্ত্রী কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেখানে কলেজের তহবিল দেখার কে? একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বামী ও স্ত্রী যৌথ চেক স্বাক্ষরকারী এটা বোধ হয় নতুন ওয়াল্ড রেকর্ড হিসেবে গ্রীনিচ বুকে স্থান পাওয়ার যোগ্য? প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি যেখানে স্ত্রী সেখানে আর আটকায় কে? ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী কোটা থেকে এম পি মনোনীত হয়ে তাকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয় কিন্তু পরবর্তীতে এম পি না হয়েও তাকে সভাপতি করা হয় বিশেষ কারণে। সেই বিশেষ কারণ অধ্যক্ষই জানেন।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো প্রকাশ, কলেজে বর্তমানে শিক্ষক আছে ১৫৩জন। তৎমধ্যে ৪৫জন শিক্ষক সরকারি এমপিও ভুক্ত। অভিযোগ রয়েছে, কলেজে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্তা করা হয় না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদিত নয় এমন শিক্ষকদেরকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়। সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙ্গিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে পদোন্নতী দেওয়ার নজির স্থাপিত হয়েছে।
এব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ ক্য থিং অং-এর মতামত নেওয়ার জন্য তার ০১৭১১-০৩৮ ৫৯০ সেল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: