ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

দুই সেনাপ্রধানের কণ্ঠেই যুদ্ধের দামামা, সীমান্তে প্রস্তুতির আলামত

bsfজম্মু-কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা এবং এর আশপাশ ঘিরে চলমান উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের সেনাপ্রধানের সুরেই যুদ্ধের আভাস পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে ভারতের সম্ভাব্য সব রকমের আঘাতের সমুচিত জবাব দেওয়ার হুমকির পর পাকিস্তানের সীমান্তে যুদ্ধপ্রস্তুতির আলামত, এবং এ নিয়ে সেনাপ্রধানের সন্তুষ্টির খবর পাওয়া গেছে। ওদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলের কমান্ড (নর্দার্ন কমান্ড) পরিদর্শন করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেগুলোও যুদ্ধের প্রস্তুতিকেই ইঙ্গিত করে। দুই দেশের সীমান্তে সেই যুদ্ধের আলামতও পাওয়া গেছে। দুই সেনাপ্রধানের এই যুদ্ধবাদী সুর যখন বেজেই চলেছে, ততক্ষণে আজাদ কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় আবারও গোলাগুলি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী বুধবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের এক খবরে বলা হয়, আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার এক ভারতীয় সেনাকে আটক করা হয়েছে। তবে সে খবর করে দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের যে সেনার কথা বলা হয়েছে তিনি আসলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই অংশ নেননি। গ্রেফতার ভারতীয় সেনাকে যেন তাড়াতাড়ি মুক্তি দেওয়া হয় সে ব্যাপারে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছে ভারত।

নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের দাবিকৃত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-নামের অভিযান-এর দুইদিন পর শনিবার ভোরবেলায় আজাদ কাশ্মিরে দুই দেশের মধ্যে আবারও গোলাগুলি সম্পন্ন হয়। অবশ্য এতে কেউ হতাহত হয়নি। এদিন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ এক ভারতবিরোধী হুঙ্কার ছেড়েছেন। জেনারেল শরিফ বলেন, ‘শত্রুপক্ষের সব রকম আঘাতের যথাযথ প্রত্যুত্তর দেবে পাকিস্তান। কোনও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়ে পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’ তার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, অবসরে যাওয়ার আগে তিনি ভারতবিরোধী কঠোর নীতির বাস্তবায়ন এবং কঠিন প্রতিশোধ নিতে চান বলেই ধারণা করছে ভারত। তার কার্যক্রমে প্রতিবেশী দেশের ভাবনার প্রতিফলনও দেখা গেছে। ভারতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনাদের কড়া নজরদারি নিয়ে শুক্রবার তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তানের তরফে রাহিল যখন তার দেশের সেনাদের যুদ্ধপ্রস্তুতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, তেমনি করে নিজ দেশের যুদ্ধ প্রস্তুতির খোঁজখবর করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধানও। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘জেনারেল দলবীর সিং আজ সকালে উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতরে পৌঁছান। নিয়ন্ত্রণ রেখাসহ জম্মু কাশ্মিরের অবস্থা এবং অভিযানের প্রস্তুতির বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে সেনাপ্রধান নর্দার্ন কমান্ডকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সফলভাবে পরিচালনার জন্য অভিনন্দন জানান এবং অভিযানে অংশ নেওয়া কমান্ডোদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নর্দার্ন কমান্ডের পর সেনাপ্রধান ওয়েস্টার্ন কমান্ডও পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে পাকিস্তানের ভূ-খণ্ডের ভেতরে ঢুকে ৭টি জঙ্গি ঘাঁটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা) চালায় এ নর্দার্ন কমান্ড। তিন দিনের মাথায় কমান্ডটির সদরদফতরে গেলেন সেনাপ্রধান। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি দেখতে শনিবার (১ অক্টোবর) নর্দার্ন কমান্ডের সদরদফতরে গেছেন তিনি।

সেনাবাহিনীর পাকিস্তান সংলগ্ন এ কমান্ডগুলোতে ভারতীয় সেনাপ্রধানের আগমন ওই অঞ্চলে ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতিরই জানান দিচ্ছে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

 

পাঠকের মতামত: