ডেস্ক নিউজ :
মা-বাবার অতি আদর ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শিক্ষা জীবনে বেপরোয়া এবং উৎশৃংখল হয়ে উঠে এক সময়ে আলোচিত-সমালোচিত ইমরানুল হক। তার অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত থাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে বিপূল পরিমাণ ইয়াবাসহ ইমরানুল হক আটক হওয়ায় তার অপকর্মের থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
গত ৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে ক্রেতা সেজে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল রাজধানীর শ্যামপুর থানার পোস্তগোলা হতে ৬০হাজার ইয়াবাসহ তাইজুল ও ইমরানুল হককে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরানুল ও তাইজুল জানায়, বিত্তশালী হবার পরও লোভে পড়ে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়ায়। তারা দুজনেই বন্ধু, বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রোজারঘোনা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এক সময়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী এনামুল হকের পুত্র ইমরানুল হক আটক হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক তার অপকর্ম। সে স্কুল-কলেজ পড়াকালীন তার সুদর্শন চেহারা ও ফিগার নিয়ে বিয়ের প্রলোভনে স্কুল ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে সতীত্ব হরণের ঘটনা আবারো আলোচনায় চলে আসে।
২০১৩ সালে ইমরানের দুইবোন পাপিয়া মোস্তফা পপি ও তামরীন আকতার রুবির ক্লাসমেট হ্নীলা উত্তর ফুলের ডেইলের মরহুম নুরুল ইসলামের মেয়ে ও তৎকালীন হ্নীলা হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী তসলিমা আক্তার নুনু (১৪) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১১মে হ্নীলা হাইস্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী তসলিমা আক্তার স্কুলে প্রাইভেট পড়তে এলে সম্পর্কের জেরধরে হ্নীলা মৌলভী বাজারস্থ রোজারঘোনার এনামুল হকের পুত্র ইমরানুল হকসহ ৩বন্ধু নিয়ে সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের দুইদিন পর বিকালে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মাধ্যমে উম্মাদ অবস্থায় বাড়ির পাশে ফেলে দিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন সে এতদিন কোথায় ছিল বলে জানতে চাইলে তাকে ইমরানুল অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার এক পর্যায়ে ছটফট করে ঢলে পড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স হয়ে জেলা সদর হাসপাতাল নেওয়া যায়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ মে সকাল সাড়ে ৯টারদিকে মেডিসিন বিভাগের ১৬ নং ওয়ার্ডে ২৫নং কেবিনে মৃত্যুবরণ করে। পোস্ট মর্টেম শেষে ১৮ মে রাত ১০টারদিকে লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে পরদিন সকালে দাফন করা হয়।
এদিকে স্থানীয় মহল ধারণা করেন, লম্পট প্রেমিকের প্রতারনায় অভিমানে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় সুন্দরী এই স্কুল ছাত্রী। কিন্তু নিহত স্কুল ছাত্রীর পরিবার অসহায়-গরীব বিধায় মা সুফিয়া খাতুন থানায় মামলা করেও কোন ধরনের সুবিচার পায়নি। উক্ত বিষয়ে হ্নীলা হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং মামলার প্রেক্ষিতে দাফনের ১০দিনের মাথায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। ছেলের পরিবার বিত্ত-বৈভবের মালিক এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় স্পর্শকাতর এই মামলাটি ধামা-চাপা দেয়।
এই ব্যাপারে নিহত স্কুল ছাত্রীর মামা বনি আমিন জানান, এই ব্যাপারে একটি অপহরণ, ধর্ষন ও হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও কোটিপতি পিতা ছেলেকে রক্ষার মিশনে থাকায় গরীব পরিবারের স্কুল পড়–য়া মেয়েটির নৃশংস ঘটনার সুবিচার আদৌ হয়নি। এই ইমরান সুদর্শন চেহারা ও কোটিপতি বাবার দাপট খাটিয়ে পড়াশুনার সময় বিভিন্ন কলেজ-ভাসির্টিতে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে সর্বনাশ করার অভিযোগ রয়েছে।
আলোচিত এই এনামুল হক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালী এবং হ্নীলার প্রভাবশালী বংশের জামাতা হওয়ার সুবাদে ইয়াবা চোরাচালানে সংশ্লিষ্ট হয়ে অল্পদিনে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে কোটিপতি বনে যায়। যার কারণে মাদক চোরাকারবারী হিসেবে বিভিন্ন তালিকায় এই এনামূল হক স্থান পান। এলাকায় অপ-প্রচার ছড়িয়ে পড়ায় ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর অজুহাতে কক্সবাজারে ভাড়াবাসায় অবস্থান নেয়।
সম্প্রতি তার ছেলে ইমরানুল হক ইয়াবাসহ আটক এবং তৎকালীন হ্নীলা হাইস্কুল ছাত্রী তসলিমা আক্তার নুনু (১৪) হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে এনামূল হকের মুঠোফোন (০১৮৩৫-৬১৪৬৫২) যোগাযোগ করা হলে এক শিশু রিসিভ করে বাহিরে রয়েছে বলে জানায়। তাই উপরোক্ত বিষয়াদি নিয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় হতে মাষ্টার্স শেষ করে মাদক চোরাচালানে জড়িত হয়ে আবার ছাত্র পরিচয়ে আটকের ঘটনায় পুরো দেশের সচেতন ছাত্র সমাজের মধ্যে নিন্দা ও চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। এই ইমরানুলের মত আর কোন শিক্ষার্থী যেন এত বড় মাদকের চালানসহ আটক হয়ে জাতিকে কলংকিত না করে সেই প্রত্যাশাই থাকল! সুত্র : টেকনাফ টুডে
পাঠকের মতামত: