নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। নবান্নের উৎসব চলছে কৃষকের ঘরে ঘরে। নতুন ধানের সাথে নতুন চালের পিঠা উৎসব বেশিরভাগ কৃষক পরিবারে। বোরো ধানের সফল উৎপাদনের পর কৃষকরা বাজিমাৎ করেছে আমন উৎপাদনে। কোন ধরনের রোগ বালাই না থাকায় আমনের এ বাম্পার ফলন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আকম শাহারিয়ার। তিনি বলেন- এ বছর কোন ধরনের রোগ বালাই ছিলনা, কৃষকরা সঠিক সময়ে সার, বীজ এবং সেচ দিতে পেরেছে। ফলে আমনের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামি সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা সব ধান কাটা শেষ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। উৎপাদনে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ে ২ লাখ মে.টন চাল উৎপাদনের লক্ষামাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল তা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানান। মওসুমের শুরুতে জেলার প্রায় ২ লাখ কৃষক আমন চাষে মাঠে নামে। এ বছর অনুকুল আবহাওয়া, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের সঠিক নির্দেশনা, ধানে রোগ বালাই কম হওয়ার কারনে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের। ইতোমধ্যে জেলায় ৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে অবশিষ্ট ধান আগামি সপ্তাহের মধ্যে কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক। জেলার সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে উখিয়া, টেকনাফ এবং চকরিয়ায়। ধান কাটা ও বেশি হয়েছে উক্ত ৩ উপজেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় এবার ৭৭ হাজার ৯’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার ৪শ ২ মেট্রিক টন চাল। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আমন কাটা ১ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে। এ বছর আমন মওসুমে তিন জাতের ধানের আবাদ করা হয়। আবাদকৃত তিন জাতের ধান হল উফশী, স্থানীয় এবং হাইব্রীড। এদের মধ্যে হাইব্রীড জাতের ১৬৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয় ৫৭৪৮ মেট্রিকটন। উপসী জাতের ৭২০০১ হেক্টরে ২,০০,১৭৭ মেট্রিকটন। এছাড়া স্থানিয় জাতের ৪৩১৮ হেক্টরে ৬৪৭৭ মেট্রিকটন। মওসুমের শুরুতে বন্যার কারণে চাষাবাদে কৃষকদের বিঘœ ঘটলে উৎপাদনে এর প্রভাব পড়েনি। বন্যার কারণে রোপার কোন ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকরা নির্বিগ্নে চাষাবাদ চালিয়ে যায় এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিবিড় বার্ষিক সফল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে আমন ধানের উপজেলা ভিত্তিক জমি আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। জেলায় চলতি আমন মওসুমে ৭৭ হাজার ৯শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১২ হাজার ৪’শ ২ মেট্রিক টন চাল। উপজেলা ভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে চকরিয়ায় ১৯ হাজার ৩শ হেক্টরে ৫৪ হাজার ৩৪০ মেঃ টন। পেকুয়ায় ৮ হাজার ৪শ ৬৬ হেক্টরে ২২ হাজার ৫শ ২৮ মেঃ টন। রামুতে ৯ হাজার ২শ ৭০ হেক্টরে ২৫ হাজার ২শ ১৪ মেঃ টন। সদরে ৯ হাজার ১শ হেক্টরে ২৪ হাজার ৬শ ৫৮ মেঃ টন। উখিয়ায় ৯ হাজার হেক্টরে ২৪ হাজার ৮শ ৯৫ মেঃ টন। টেকনাফে ১০ হাজার ৮শ ৬০ হেক্টরে ২৮ হাজার ৮শ ৪ মেঃ টন। মহেশখালীতে ৮ হাজার ২শ হেক্টরে ২২ হাজার ৩শ ৪৮ মেঃ টন এবং কুতুবদিয়ায় ৩ হাজার ৭শ ৮৯ হেক্টরে ৯ হাজার ৬শ ১৫ মেঃ টন।
এদিকে সদর ও রামু উপজেলার কয়েকজন প্রান্তিক ও বর্গাচাষি জাকের হোসেন, আবদুল হাকিম, সিরাজুল্লাহ , কামাল হোসেন জানান- সরকার ৩৬ টাকা দামে ধান ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কিন্তু মিলাররা নিদির্ষ্ট কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে আমরা অনেকে নায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের দাবি ধান সংগ্রহ করতে যেন সংশ্লিষ্টরা প্রান্তিক চাষিদের কাছে যায়। শুধুমাত্র মিলারদের নির্দিষ্ট তালিকা না করে সব কৃষকদের কাছ থেকে যেন ধান ক্রয় করা হয়।ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপ কামনা করেন কৃষকরা। এছাড়া ঝিলংজা বীজের খামারে সরকারিভাবে আনা বীজ মৌসুমের শুরুর দিকে কালোবাজারে চলে যাওয়ায় চড়া দামে বীজ ক্রয় করার জন্য কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছিল। যার কারনে কৃষকরা মওসুমের শুরুতে বীজের বাজার তদারকির জন্য ডিলারদের কাছে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারনে উদ্বৃত্ত খাদ্য জেলার খাদ্য সংকট কাটিয়ে দেশের নীট উৎপাদনে অবদান রাখবে বলে জানান সদরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হাকিম।
পাঠকের মতামত: