মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার ::
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গত ছয় মাসে দুই‘শ এর বেশি ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে ৩২ থেকে ৩৫ টি ধর্ষণের স্বিকার নারী পরীক্ষা করাতে এসেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গাও আছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তবে এখানে সব চেয়ে গুরত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে পরীক্ষার মধ্যে বেশির ভাগই নেগেটিভ হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছে অনেকে ব্যাক্তিগত ঝালেমাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ধর্ষণের মত জঘন্য বিষয় সামনে আনছে। তবে আবার অনেক শিশু বা নারীকে দেখা যায় খুবই বিভৎষ ভাবে তাদের অত্যাচার করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে আলাপ কালে জানা গেছে গত ২ দিনে ৬ জন ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হয়েছে। এই সংখ্যা খুবই উদ্বেগ জনক। আর গত ছয় মাসে ২০০র বেশি নারী ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে। যেহেতু এটা খুবই গোপনিয় বিষয় তাই আমার নামও প্রকাশ করা যাবে না। তবে আমার জানা মতে গত বছরও ধর্ষণ বিষয় নিয়ে প্রচুর নারী ওসিসিতে ভর্তি হয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে পরীক্ষায় বেশির ভাল নেগেটিভ আসছে। তবে পজিটিভের সংখ্যা কম না। তবে উদ্বেগ জনক বিষয় হচ্ছে অনেকে ব্যাক্তিগত ঝামেলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, আবার অনেকে প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে ধর্ষণের মত বিষয় নিয়ে হাসপাতালে আসে।
এক কর্মকর্তা জানান, মাঝে মধ্যে কিছু রোগি পায় যাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করা হয়েছে। আবার কিছু রোগি আছে সে নিজেই বলে আমার সাথে কিছুই হয়নি তবে পরিবারের চাপে এখানে এসেছে। আর সম্প্রতী রোহিঙ্গা রোগিও বেশ আসছে ফলে সত্যিকার অর্থে স্থানীয়দের সেবা দিতে বেশ সমস্যা হচ্ছে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী সামাজিক সচেতনতা না বাড়লে এই সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব।
এ ব্যপারে কক্সবাজার বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি শামিমা আক্তার বলেন,আমার মতে কোন নারী সেচ্ছায় ধর্ষিত হয়েছে অপবাধ মাথায় নিতে চায়বে না। কারন তার ভবিষ্যত আছে। যেমন গত কয়েকদিন আগে শহরের পাহাড়তলীতে রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ কর্তৃক এক নারীকে স্বামীর সামনে বেধে ধর্ষণ করা হয়েছে,ঘোনারপাড়ায় মাইজ্জা নামের আরেক রোহিঙ্গা কর্তৃক কিশোরীকে ধর্ষণের খবর গনমাধ্যমে আসছে। যদি যে সব সংবাদ প্রচার না হতো তাহলে সে সব নারীরা ন্যায় বিচার পেত না কারন প্রত্যেকে গরীব অসহায় পরিবারের। তবে ভিন্ন কিছুও মাঝে মধ্যে দেখি। আমি মনে করি রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজারের সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, নারীরা মায়ের জাতী উনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি,স্থানীয় অনেক বিচার শালিষ করতে গিয়ে দেখা গেছে জমি সংক্রান্ত বিরোধ,টাকা পয়সার লেনদেন অথবা পারিবারিক ঝালেমা ইত্যাদি কারনে ঘর্ষণের মত বিষয়ে অভিযোগ করে। তবে যাচাই বাছাই করতে গেলে দেখা যায় ঘটনা সঠিক না। অনেক সময় অভিযোগকারী নারী নিজেই স্বিকার করে প্রতিশোধ নিতে এই অভিযোগ করেছিলাম।
আবার দেখা যায় অনেকে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক করেছে,পরে তাদের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে তখনো ধর্ষণের অভিযোগ আনে। তবে ভিন্ন চিত্রও আছে গ্রামের কিছু খারাপ প্রকৃতির লোকজন আছে তারা ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনায় আমরা সে রকম কিছু পেলে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।
উখিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অজিত দাশ বলেন, বর্তমানে এনড্রয়েট মোবাইল সবার হাতে হাতে সেখানে চাইলেই খুব সহজে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা সহজেই খারাপ পথে বাড়াচ্ছে ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাই রোহিঙ্গাদের দাবী করে তিনি বলেন,২০১৭ সালের আগে আসা অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার সহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের অনেকের ছেলে মেয়ে স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে। আমি মনে করি সেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বা তাদের শিক্ষার অভাবের প্রতিফলন আমাদের সমাজে পড়ছে।
কক্সবাজার ইমাম সমিতির সভাপতি মৌলানা সিরাজুল ইসলাম ছিদ্দিকি চকরিয়া নিউজকে বলেন,ইসলামি শিক্ষাই পারে ধর্ষণ,নারী নির্যাতন সহ সব কিছুকে রোধ করতে। ছোট বেলা থেকে ছেলেমেয়েদের ইসলামি শিক্ষা,পর্দা করার অভ্যাস, হারাম হালাল, এক কথায় নৈতিক শিক্ষা নিতে পারলে ছেলে হউক মেয়ে হউক সে কখনো বিপদগামী হতে পারেনা। তাই স্কুলে কলেজের নৈতিক শিক্ষার প্রতি বেশি জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: