শাহেদ ইমরান মিজান, ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ফিরে:
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিনের অঙ্গাংশ ছেঁড়াদ্বীপ। বসতিহীন ছোট্ট এই দূরদ্বীপেও পালিত হয় ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস! তার জন্য গড়া আছে প্রাণের শহীদ মিনারও। তার পাশে উড়ন্ত বাতাতে পত্ পত্ করে উড়ছে জাতীয় পতাকা। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার মতোই ব্যাপার। ছেঁড়াদ্বীপে গেলে এই দৃশ্য চোখে পড়বে। সম্প্রতি ছেড়াদ্বীপ ঘুরে এই প্রতিবেদক এর আদ্যোপান্ত তুলে এনেছেন।
খোঁজ করে পাওয়া গেছে সেই দূর্লভ দেশপ্রেমের এক নায়কের সন্ধান। তিনি হলেন সাদাম হোসেন। বছর পঁশিচের চটপটে টগবগে এক তরুণ। আলাপকালে তার যেমন তর দেশপ্রেম প্রকাশ হলো তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়।
জানা গেলো, মা, তিন ভাই ও দু’বোন নিয়ে পিতৃহীন সাদ্দাম জীবন সংগ্রাম করছেন। জীবিকার তাগিদে ঠাঁই হয়েছে অকূল বঙ্গোপসাগরের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা দূর্গম ছেঁড়াদ্বীপে। সেন্টমার্টিনের আদি বাসিন্দা হলেও মরহুম পিতার পেশাকে ধরে থেকে তারা স্বপরিবারে থাকেন এই দূর ছেঁড়াদ্বীপে। সেখানে গড়ে তুলেছেন বসতবাড়ি ও জীবিকার বাহন। মূলত ছেঁড়াদ্বীপ ঘিরে সারা বছর তাদের জীবন পরিচালিত হয়। পর্যটন মৌসুমে স্থায়ী নিবাস হয় এই দ্বীপ। ২০ বছর ধরে তারা এভাবে রয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা ২৬ মার্চ। এই সময় পর্যটনের মৌসুম বলে মূল বাড়ি সেন্টমার্টিনে থাকা হয় না। এই সময় জুড়ে ছেঁড়াদ্বীপে থাকা হয়। তাই কোন জাতীয় দিবস পালন করার সুযোগ হয় না। দেশের প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশের সাধ জাগলেও পারি না শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস পালনে অংশ নিতে পারি না। এই জন্য নিজেকে শূন্য শূন্য লাগে। সে শূন্যতা কাটিয়ে তুলতে ছেঁড়াদ্বীপে বাঁশ দিয়ে বানিয়েছি একটি শহীদ মিনার। পাশে লম্বা বাঁশের মাথায় টাঙিয়ে দিই জাতীয় পতাকা।’
তিনি জানান, সব জাতীয় দিবসের সময়ে ছেঁড়াদ্বীপে অনেক পর্যটক বেড়াতে যায়। পর্যটকদের সাথে নিয়ে সব জাতীয় দিবস পালন করা হয়। তার দৃঢ় কথাই এই দাবীর পক্ষে সাক্ষী।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমিক মানুষ আছে। তবে দেশের প্রতি দরদ নেই এমন মানুষও কম নয়। এই সংখ্যাটা দিনে দিনে বাড়ছে এমন রবও শোনা যায়। কিন্তু এরপরও সাদ্দাম হোসেনের মতো দেশপ্রেমিকদের ভালোবাসাই বাংলাদেশ একদিন সত্যিই সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে-এমন প্রত্যাশা করা-ই যায়।
পাঠকের মতামত: