অনলাইন ডেস্ক ::
ছাত্রদলের নতুন কমিটি হচ্ছে—খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন আলোচনা প্রায় নিয়মিতই হতো। কিন্তু গত তিন মাসে পরিস্থিতি একদমই পাল্টে গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতারাও এখন আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখান না। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, পরে ছাত্রদলের কমিটি।
এ অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতারা। তাঁরা বলছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ কোনো নেতা নিজ থেকে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন না। আর খালেদা জিয়া মুক্ত থাকা অবস্থায় কমিটি না হওয়ার জন্য ছাত্রদলের সাবেক কয়েকজন নেতা দায়ী। একমাত্র তারেক রহমান চাইলেই যেকোনো সময় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।
দেড় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রদল। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথমে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ৭৩৮ জনের ঢাউস কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাউস এই কমিটি দিয়েও সবার মন রক্ষা করা যায়নি। ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের একটি অংশ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেছে। নেতা-কর্মীদের ক্ষুব্ধ একটি অংশ দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরও চালিয়েছে।
ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমাদের ভাবনার বিষয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও আসন্ন নির্বাচন। এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।’
গঠনতন্ত্রে না থাকলেও বিএনপির চেয়ারপারসনকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে ভাবা হয়। তাঁর স্বাক্ষরে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্রে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সে হিসাবে বর্তমান কমিটি সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে, কমিটির নেতাদের বেশির ভাই সক্রিয় নন। সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বড়জোর শ-খানেক নেতাকে দেখা যায়।
ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন নেতা বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক (আগের কমিটিতে ছিলেন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক) শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে যাতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করবেন তাঁরা।
সারা দেশে ছাত্রদলের ১০৭টি সাংগঠনিক ইউনিট আছে। গাজীপুর ও মেহেরপুর জেলা কমিটি হয়েছে ১৬ বছর আগে। পটুয়াখালী জেলা কমিটি হয়েছে এক দশক আগে। আরও অনেক জেলা আছে, যেখানে ৭/৮ বছর আগে কমিটি হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো গঠনের উদ্যোগও দেখা যায়নি। বর্তমান কমিটি ২০১৪ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪৫টি ইউনিটের কমিটি করেছে। তবে অধিকাংশই আংশিক কমিটি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে গত এক বছরে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা যায়নি।
ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজীব আহসান এখন কারাগারে আছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আছেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পার করছে। এ অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রথম আলো
পাঠকের মতামত: