চাঁদের ¯িœগ্ধ আলো যেমনি জাগতিক সবকিছুকে চনমনে রাখে তেমনি শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমী এই শহরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে রেখেছে অফুরান প্রাণ সঞ্চারী কর্ম চাঞ্চাল্যে। চাঁদ যেমন বেঁচে থাকবে হাজার বছর তেমনি শব্দায়ন বেঁচে থাকবে অযুত-কোটি বছর, হয়ে কক্সবাজারের চাঁদের আলো। বাংলাদেশে ভাষা ও সাহিত্যের বাচিক শিল্পচর্চার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমীর ৩২তম জন্মদিনের পিঠা উৎসবে কথাগুলো বলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সোমেশ্বর চক্রবর্তী।
গতকাল বিকালে কক্সবাজার হোটেল সিলভার শাইন চাঁদোয়ায় ‘মঙ্গল গাও আনন্দমনে মঙ্গল প্রচারো বিশ্বমাঝে’ এই শিরোনাম নিয়ে শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমীর ৩২তম জন্মদিন উপলক্ষে হয়ে গেল বর্ণিল পিঠা উৎসব। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি কথামালা, আবৃত্তি আর গানের মধ্য দিয়ে শহরের সাহিত্য পিপাসুদের ভিড়ে ঝলমল হয়ে উঠেছিল পুরো উৎসবস্থল। চাঁদ হয়তো ছিলনা, কিন্তু শত শত চাঁদ মুখে ভরে উঠেছিল অনুষ্ঠান অঙ্গন। শব্দায়নের বর্তমান বন্ধুরাতো ছিলই, ছিল পুরনো দিনের অনেক বন্ধুরাও। ছোট ছোট সোনামনিরা যেমন গান গেয়েছে, তেমনি কথামালা উচ্চারণ করেছেন ৮০ বছরের তরুণ শব্দায়ন সুহৃদও।
৩২তম জন্মদিনে শব্দায়নের পরিচালক জসীম উদ্দিন বকুল বলেন, এই আয়োজনে শব্দায়ন সুহৃদগণদের জন্য নকশী পিঠা, খেজুরী, কেকাই, আতিক্ক, পাক্কন, ধুপ পায়েসসহ ৪৫ রকমের বিভিন্ন পিঠার ৩ হাজার ৮০০ নমুনা হাজির করেছে। এছাড়াও এই উৎসবে এক ভিন্ন ধরনের আয়োজন হচ্ছে জীবন্ত পিঠা। পিঠা উৎসব শুরুর নিমিষেই কয়েক শত শিশু, তরুন, বৃদ্ধ, মানব-মানবী মিলে সোল্লাসে নিমেষেই পিঠা খাওয়া শেষ করে জানান দিলো আজ শব্দায়ন পরিবার কত বড়। তাদের এই প্রবল উপস্থিতি আমাকে প্রচন্ডভাবে প্রাণিত করল ৩৩তম জন্মদিনের দিকে পা বাড়াতে। প্রথম জন্মদিনে যেমন খুশি ছিলাম আজকেও সেই খুশিটাই অনুভব করছি এত এত লোকের উপস্থিতি দেখে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কক্সবাজারের আলোকিত জন এড. আবুল কালাম আজাদ শব্দায়নকে কক্সবাজারের সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবে তুলে ধরে বলেন, যারা কক্সবাজারকে সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে দেখতে চায় তারা নিজের গরজে এগিয়ে নেবে শব্দায়নকে। বিশিষ্ট এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান পাল বলেন, বাংলাদেশের সবথেকে প্রাচীন আবৃত্তি চর্চা প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারে, এই সংবাদ কক্সবাজারের সন্তান হিসেবে আমাকে গর্বিত করে। জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ আলী জিন্নাত বলেন, আপন সৌরভ গুনে শব্দায়ন বেঁচে থাকবে শত-সহ¯্র বছর। এই শহরের শব্দ সৈনিকরাই আরো উজ্জল করে তুলবে এই প্রতিষ্ঠানকে। কবি সিরাজ বলেন, মান বাংলা চর্চায় আমার হাতে খড়ি হয়েছে শব্দায়ন থেকে। শব্দায়নের কাছে আমি ঋনী। প্রতিষ্ঠানটির অনেক কন্ঠ যোদ্ধা এখন আলো ছড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যা থিং অং, সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মকবুল আহমেদ, কন্ঠ শিল্পী প্রবীর বড়–য়া, অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ, শব্দায়ন রামু উপ-কেন্দ্রের উপ-পরিচালক অধ্যাপক মানসী বড়–য়া, অধ্যাপক সুচন্দা, কবি মানিক বৈরাগী, কবি নিলয় রফিক, সিনিয়র শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন, সোহেল ইকবাল, সাংবাদিক সুনিল বড়–য়া, তৌফিকুল ইসলাম লিপু, সেবা টেলিকমের দেলোয়ার হোসেন, ইউএনএইচসিআর এর সিনিয়র অফিসার ইখতিয়ার উদ্দিন বায়েজিদ, ডাব্লিউএফপি’এর কক্সবাজার প্রধান সিনজিয়া ক্রশিয়ানী ।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব মিনহাজ চৌধুরীর সঞ্চলনায় পিঠা উৎসবের আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন মিলন ও শব্দায়নের অভিভাবক ফোরামের আহবায়ক নাসিমা আক্তার তাদের অভিমত ব্যাক্ত করেন। শিশু-কিশোর ও জ্যেষ্ঠ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জন্মদিনের গান, একুশের গান-কবিতা পরিবেশন করেন।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলার সুশীল সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনুরাগী, কবিতা প্রেমী ও আবৃত্তি অনুরাগীগণ।
পাঠকের মতামত: