ঢাকা,বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম কক্সবাজারে অবস্থানকারী চীনাদের দেশে যেতে মানা

করোনা ঠেকাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জোরদার

নিউজ ডেস্ক ::
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস্ক পড়ে ডিউটি করছেন। হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে চীন থেকে আসা যাত্রীদের করা হচ্ছে স্ক্যানিং। তবে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পদ্মাসেতুসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা চীনের নাগরিককে স্বদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, চীনের রহস্যময় ‘করোনা’ নামে এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। চীন থেকে আসা এবং চীন ট্রানজিট যাত্রীকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মীদের দেশে আসা-যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা ছুটিতে চীনে আছেন, আপাতত তাদের কেউ বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না। আর যারা প্রকল্প এলাকায় আছেন তাদের কেউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চীনে ফেরত যেতে পারবেন না।

এরই মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প, কক্সবাজারের মগনামা প্রকল্প, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি, মিরসরাই ইকোনমিক জোন, বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, শাহ আমানত বিমানবন্দরে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। নতুন ভাইরাসকে নিয়ে আমরাও পূর্ব সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে গত এক সপ্তাহে কোন ধরনের ভাইরাস বহনকারী যাত্রী শনাক্ত হয়নি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন পোস্টার লাগানো হয়েছে। সতর্ক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়েই যাত্রীর তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। তবে এখনও কোন যাত্রীর গায়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ধরা পড়েনি। করোনাভাইরাস নিয়ে বিচলিত না হয়ে আরও বেশি সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আবদুল কাদের তাদের প্রকল্পের চীনা কর্মীদের বিষয়ে এমন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত নই। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা খুব সতর্ক অবস্থায় আছি যেন কোনও ঝামেলা না হয়। চীনারা যারা দেশে গেছে তাদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আর বাংলাদেশ থেকে কেউ যাচ্ছে না।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পে চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সিনিয়র অক্যুপেশনাল অ্যান্ড হেলথ স্পেশালিস্ট মাহমুদ হোসেন ফারুক।

তিনি বলেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্টাফদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন ব্যবস্থা ও মাস্ক পরিধান করা, সময়ে সময়ে আইইডিসিআর (ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ) এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। তারাও (আইইডিসিআর) বিষয়গুলো মনিটর করছে।’

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের চীনা কর্মীদের বিষয়েও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে প্রায় ২৫০ জন চীনা কর্মীর বেশিরভাগই বেইজিংয়ের অধিবাসী। জানা মতে উহানের কেউ নেই। তারপরও নানা সূত্রে উহানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে। কাজেই আমরাও এ বিষয়ে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।

এস আলম গ্রুপের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পেও এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই শুধু নয়, চীনা নাগরিকদের জন্য এ প্রকল্পের প্রধান ফটকে স্ক্যানিং মেশিনেরও ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। চীন থেকে আসা ৫ শতাধিক কর্মী নিয়োজিত আছেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। তাই করোনাভাইরাস সংক্রামক ছড়ানোর খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে এখানে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ‘স্ক্রিনিং’ ব্যবস্থা ছাড়াও চীনা নাগরিকদের দেশে যাতায়াত সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দেশে যাওয়া-আসা করতে দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, চীনে এ পর্যন্ত ১০৬ জন মারা গেছে করোনাভাইরাসে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম যে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাকে ‘করোনাভাইরাস’ বলে শনাক্ত করেছিল। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর, হংকং, সান ফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কে চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছিল। বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বিমানবন্দরে স্ক্যানিং শুরু করার কথা জানানো হয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

প্রসঙ্গত, ইউহানের পর চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও। এদিকে থাইল্যান্ড এবং জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়া একই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। উল্লেখিত লক্ষণগুলো কারও মধ্যে দেখা গেলে এসব হটলাইনে ফোন করে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫।

পাঠকের মতামত: