নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়া ও লামার সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেন ইটভাটার জন্য সৃজন করা হয়েছে। ইটভাটার মালিকেরা এখানে প্রতি বছর সরকারী বনাঞ্চলের কঁচি কঁচি গাছ কেটে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের জন্য আগাম কিনে! নেয়। মৌসুমের শুরুর আগে থেকেই ইটভাটার মালিকেরা লোক নিয়োগ করে বনাঞ্চল থেকে প্রকাশ্যে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এভাবে প্রতি বছর চকরিয়াসহ লামার ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতংয়ের ৪২টি অবৈধ ইটভাটায় চকরিয়া ও লামার বনাঞ্চল থেকে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার কাঠ পুড়ছে। চলতি বছরও ওই একই পরিমানের কাঠ পুড়েছে এসব ইটভাটায়। এসব দেখার কেউ নেই, যারা আছে তারাই বরং বন ধ্বংসকারীদের সহযোগিতা দিচ্ছে। এতে ইটভাটার মালিক, প্রভাবশীলী ব্যক্তি, কতিপয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সংশি¬ষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও বনকর্মীরা লাভবান হলেও এতদাঞ্চলের বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বনাঞ্চল গুলো ন্যাড়া বনভূমিতে পরিনত হচ্ছে।
জানা যায়; চকরিয়ার হারবাংয়ে ২টি, মানিকপুরে ৪টি, ফাঁসিয়াখালীতে ১টি, পাশের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে ৫টি, ছাগল খাইয়ায় ১টি, স্বরাই ১টি, গজালিয়ায় ২টি ও ফাইতংয়ের ২৬টিসহ ৪২টি ইটভাটা চকরিয়াসহ লামার বনাঞ্চল ঘেঁষে বা ভেতরে গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটগুলোতে প্রধানত কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়ে ইট তৈরী করা হয়। এসব ইটভাটার জ্বালানি কাঠগুলোর বেশীরভাগই চকরিয়ার বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ইটভাটায় সংশি¬ষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটার মালিকেরা ইট পুড়ানোর জন্য মৌসুম শুরুর আগেই জ্বালানি হিসাবে পাশের বনাঞ্চলের গাছ কিনে নেয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, কতিপয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও অসাধু বনকর্মীরা যোগসাজস করে জ্বালানি হিসাবে সরকারী বনের গাছ বিক্রি করে দিয়ে থাকে। মৌসুমের সময় বা একটু আগেই ইটভাটার মালিকরা লোক দিয়ে বনাঞ্চলের গাছগুলো কেটে নিয়ে মজুদ করে রাখে। এলাকাবাসি জানায়; কেটে নেয়া বনের দৃশ্য দেখলে যে কেউ হতবাক হয়ে যাবে।ইটভাটার মালিকরা বনাঞ্চলের গাছের পাশাপাশি গাছের গোড়ালি, ঝুপজঙ্গল, লতাগুল্মসহ সব কিছু কেটে নিয়ে যায়।
সংশি¬ষ্ট সুত্র আরো জানায়, বছরে প্রতি ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মন জ¦ালানী কাঠ বা লাকড়ী লাগে। সে হিসাবে চকরিয়া ও লামার ফাইতংয়ে ৪২টি ইটভাটায় প্রতি বছর প্রায় ১৬লাখ ৮০ হাজার মন জ¦ালানী কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতি মন জ¦ালানী কাঠের স্থানীয় মূল্য ১৮০ টাকা থেকে ২০০শত টাকা। এভাবে ওই ৪২টি ইটভাটায় প্রতি বছর প্রায় ৩শত কোটি টাকার কাঠ পুড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ও ডুলাহাজারা এলাকার একাধিক বাগান মালিক জানান, তাদের অধীনে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী রিংভং ও ডুলাহাজারা বিটের অধীনে বিভিন্ন মৌজার তাদের দখলে থাকা বনভূমিতে বিশালাকারের বন বাগান আছে। ওই বন ভূমিতে ঘন ঘন অনেক গুলো গাছ ছিল। ওই গাছগুলো তারা মোক্তার ড্রাইভার ও ফরিদ কন্ট্রাক্টর, জালাল, রফিক, গিয়াস উদ্দিন, কবির ও সামসুলসহ বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছে বিভিন্ন বিক্রি করে দিয়ে থাকেন।
এলাকাবাসি জানায়, চকরিয়ার বিএনপি নেতা ফরিদ কন্ট্রাক্টারের ভাই জালাল উদ্দিন লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওএক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার পরিচয়ে জ¦ালানী কাঠ গুলো ইটভাটায় যাচ্ছে!। ওউ প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে জ¦ালানী কাঠ ব্যবসায়ীরা বনের গাছ কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেলেও কেউ বাধা দিতে সাহস করে না। চকরিয়া ও লামার ফাইতংয়ের বেশীরভাগ ইটভাটার মালিক বিএনপি জামাত সমর্থিত হলেও তারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নাম ধারী কিছু ব্যক্তির ছত্র ছায়ায় থাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে যুক্ত হয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে। চকরিয়ার সামাজিক বনায়নের বেশীরভাগ গাছ জোর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা অভিযোগ করার পরও গাছ লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হচ্ছে না বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়; কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিট, রিংভং (ফাঁসিয়াখালী) বিট, ডুলাহাজরা বিট, মানিকপুর বিট, কাকারা বিট ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের বরতইতলী, হারবাং বিটের বেশীর বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। এসব এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছও রক্ষা করা যাচ্ছে না। সামাজিক বনায়নের গাছও জোর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেছেন; বনের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দিয়েছেন বলে জানান।
প্রকাশ:
২০১৯-০১-২০ ১৩:৩৯:৪৫
আপডেট:২০১৯-০১-২০ ১৩:৩৯:৪৫
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- চকরিয়ায় ইট বোঝাই ডাম্পার ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে ভন্ড বৈদ্যের আবির্ভাব
- বৈষম্য মূলক নিয়োগে ফুঁসে উঠেছে চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি!
- কক্সবাজারে যোগ হচ্ছে রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টার :
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকরিয়ায় মানববন্ধন
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- কক্সবাজারে যোগ হচ্ছে রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টার :
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
- চাঁদাদাবী, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চেয়ারম্যান ইউনুছসহ ১২জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে ভন্ড বৈদ্যের আবির্ভাব
- চকরিয়ায় ইট বোঝাই ডাম্পার ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
পাঠকের মতামত: