ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ঘাতক জাহেদ মেম্বার গ্রেফতার হয়নি 

চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু

মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরে ইউপি নির্বাচনী ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ জেরে কোপাকুপির ঘটনায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ সদস্য শফিউল আলমও মারা গেছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে এদিন রাত  আনুমানিক একটার দিকে আহত শফিউল আলম (৩৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তাঁর আগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাত আটটার দিকে উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুর উত্তরপাড়া স্টেশন এলাকায় দোকানে বসাবস্থায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাহেদ সিকদার এর নেতৃত্বে ৫/৬ জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিত দোকানে ঢুকে বিজিত মেম্বার প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম ও গ্রাম পুলিশ সদস্য শফিউল আলমের উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ও গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদ সেলিমকে (৪৩) মৃত্যু ঘোষণা করেন। এসময় অপর আহত কোপাকুপিতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ সদস্য শফিউল আলমের শাররীক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় ঘটনার ৫ ঘন্টা পর এদিন রাত একটার দিকে চমেক হাসপাতালে মারা যান আহত গ্রাম পুলিশ সদস্য শফিউল আলম।
নিহত মোহাম্মদ সেলিম চকরিয়া উপজেলার উত্তর মানিকপুর এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে ও শফিউল আলম একই এলাকার মৃত আবু সালামের ছেলে। শফিউল স্থানীয় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম-পুলিশ সদস্য। অপরদিকে নিহত সেলিম একজন তামাক চাষী। ২০২১ সালে তিনি মানিকপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচন করেন।
এদিকে একসঙ্গে দুইজনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনার ২০ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেলেও গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান , ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত  ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সুরাজপুর মানিকপুর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান ইউপি সদস্য জাহেদ সিকদারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম। সেই নির্বাচনে সেলিম অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তখন থেকে এলাকার নানা ইস্যুতে জাহেদ ও সেলিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
অন্যদিকে নিহত মোহাম্মদ সেলিমের বাবা নুর মোহাম্মদ দাবি করেন, গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মানিকপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান মেম্বার জাহেদ সিকদারের বিরুদ্ধে ভোট করার পর থেকে  তাঁকে (আমার ছেলেকে) মারবে কাটবে বলে নানাভাবে শাসিয়ে আসছে জাহেদ মেম্বার। এরই জেরধরেআমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে জাহেদ মেম্বার কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন,  নিহত দুইজন স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবু বক্কর হত্যা মামলার আসামি। এ ঘটনার জেরে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে কি না, এব্যাপারে  তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া আধিপত্য নিয়ে ওই এলাকার বর্তমান ইউপি সদস্য জাহেদ সিকদারের সঙ্গে নিহত সেলিমের নির্বাচনী বিরোধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বিরোধ জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, মরদেহ  দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটনে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিকালে  চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আবু বক্করকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন নিহত আবু বক্করের স্ত্রী সোনিয়া আকতার। ওই মামলার চার্জসিটভুক্ত ( অভিযোগপত্র) আসামি ছিলেন নিহত গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ সফিউল আলম।

পাঠকের মতামত: