নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুশ শরফ সড়কের মুন্সিপাড়ায় শতবছর আগে খনন করা হয়েছিল একটি পুকুর। এক একর ১৬ শতাংশ জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা পুকুরটিই এলাকাবাসীর নিত্যব্যবহার্যের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভানোর জন্য এই পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠে ফায়ার সার্ভিসের কাছে।
গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি কৌশলে ভরাট করার অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে সেই পুকুরটির সড়কের পাশ দিয়ে মাটি ফেলে ভরাটকাজ শুরু হয়েছে। যদিও পৌর কাউন্সিলর বলছেন, পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না। সড়ক দেবে যাওয়া ঠেকাতে মাটি ফেলা হয়েছে।
হঠাৎ করে পুকুর ভরাট দেখে স্থানীয় মুন্সিপাড়া, হিন্দুপাড়াসহ আশপাশের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুকুর ভরাটের অভিযোগ এনে মৃত আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাবু মিয়ার পুত্র আনোয়ারুল মোহসীন বাদী হয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার।
অভিযোগে বলা হয়েছে, শতবছর আগে তাদের বাপ-দাদারা মুন্সিপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি পাড়ার অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের নিত্যব্যবহার্য কাজের জন্য পুকুরটি খনন করেন এক একর ১৬ শতাংশ জায়গায়। এর পর থেকে বংশ পরম্করায় পরিবারগুলো নিত্যকার্য সম্কাদন করে আসছেন। এমনকি কোনো বাড়িতে বা আশপাশের পাড়ায় আগুন লাগলে নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস পুকুরটির পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু সেই পুকুরটি ভরাটের মাধ্যমে শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মুজিবুল হক পুকুরটি ভরাট শুরু করছেন জানিয়ে ইউএনও’র কাছে অভিযোগকারী আনোয়ারুল মোহসীন বলেন, ‘এই এলাকায় আর কোনো পুকুর অবশিষ্ট নেই। তাই পুকুরটি সংরক্ষণ করাসহ মানুষের নিত্যকাজে ব্যবহারের সুবিধার্থে বর্তমান পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী তিন পাড়ে তিনটি পাকা ঘাটও নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।’
সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেছে, পুকুরটির বায়তুশ শরফ সড়কটির পাশ ধরে ডাম্পার গাড়িতে করে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। সেই মাটির ওপর স্তুপ করে রাখা হচ্ছে ইটও।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মো. ওয়ালিদ মিল্টন বলেন, ‘ডাম্পারভর্তি করে মাটি এনে ফেলার সময় পৌরকাউন্সিলর মুজিবুল হককে বাধা দেন স্থানীয়রা। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুমুল বাগিবতণ্ডা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে-কোন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু তা না করে শতবছরের পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।
তবে পুকুর ভরাট করছেন না দাবি করে পৌর কাউন্সিলর মুজিবুল হক বলেন, ‘সামনে বর্ষা শুরু হবে। তাই ভারি বর্ষণের সময় পুকুর পাড়ের সড়কটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেখানে মাটি ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া পুকুরটির সিংহভাগ অংশ আমাদের পৈতৃকসূত্রে আমার প্রাপ্ত সম্পত্তি।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘স্থানীয়দের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুকুর ভরাটের মাধ্যমে যে বা যারা শ্রেণি পরিবর্তন করার কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে পুকুরে ফেলা মাটি ও স্তূপ করা ইট অপসারণ করার কাজ শুরু করা হবে। এই বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’
পাঠকের মতামত: