চকরিয়া সদর প্রতিনিধি :: চকরিয়ায় বন্যায় অনেক গ্রাম টানা পাঁচদিন পানিতে তলিয়েছিল। এ সময় সংকটে পড়েছিলেন বন্যার্তরা। কোথাও ত্রাণের খবর মিললেও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এই অবস্থায় হাজারো মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ে। অনেক মানুষ না খেয়ে রাত পার করেছেন। গতকাল উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম কদ্দাছড়ায় গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।
বন্যায় ভুক্তভোগী নুরুল আলম ও তার স্ত্রী ছাবেকুন্নাহার বলেন, পাঁচদিন ধরে বাড়ির ভেতর গলা সমান পানি ছিল। ওই সময় ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যাই। এই অবস্থায় বাড়ির দমদমায় উঠে প্রাণে রক্ষা পাই। তারা বলেন, বাড়িতে কোনো খাবার ছিল না। বানের পানিতে সাঁতরে দোকানে গিয়ে দুই কেজি মুড়ি কিনে নিয়ে যাই। সেই মুড়িতেই পার হয়েছে পাঁচদিন। ছয়দিনের মাথায় ভেওলার মানবিক মিশন নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু যুবক ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়। তারা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেন। মানবিক মিশনের সদস্য হাসনাইন বিল্লাহ আতিক বলেন, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কদ্দাছড়া ও ঈদমণি গ্রামে কেউ খবর নিতে যাননি। খবর পাওয়ার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক পরিবারে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। কয়েকদিন ধরে অভুক্ত পরিবারগুলোর অনেকে আমাদের ত্রাণ পেয়ে কেঁদেছেন।
বরইতলী ইউনিয়নের ডেইঙ্গাকাটা গ্রামটিও দুর্গম। সেখানে এখনো পানিবন্দি রয়েছে কয়েকশ পরিবার। এসব পরিবার ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। তাই সেখানে আনিসুল ইসলাম ফারুকীর নেতৃত্বে একদল যুবক গতকাল নৌকায় করে গিয়ে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।
এদিকে চকরিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন–যাপন করছেন। বাড়ির ভেতর থেকে পানি নেমে গেলেও কাদামাটিতে থাকায় রান্না করা যাচ্ছে না। তার ওপর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় তাদের দুর্ভোগের সীমা নেই।
অপরদিকে বন্যার ভয়াবহতার কারণে গ্রামীণ অবকাঠামো ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ এখনো পুনঃস্থাপিত না হওয়ায় মানুষের কষ্টের শেষ নেই।
সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. সেফায়াত ফারুক চৌধুরী বলেন, লণ্ডভণ্ড হওয়া সড়কগুলোর যেসব স্থানে গভীর খাদ হয়ে গেছে সেখানে বালু ও মাটি ফেলে আপাতত জনচলাচল নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে সচল হয়ে যাবে এসব সড়ক।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো আগের অবস্থায় ফেরানোর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর কাজ করছে। তবে এখনো নিম্নাঞ্চল থেকে পুরোপুরি পানি সরে যায়নি। এরই মাঝে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে।
পাঠকের মতামত: