নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ‘জমি আছে ঘর নেই’ এমন দুই শতাধিক পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হল কক্সবাজারের চকরিয়ায়। এসব পরিবার কয়েকমাস আগেই জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেছিল। স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, অসহায় ও হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধসহ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা এসব পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন ঘরে পেয়ে এখন মহাখুশি। এজন্য এসব পরিবারের সদস্যরা দুই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নামাজ পড়েও দোয়া করছেন। পরিবারগুলোর সদস্যরা বলছেন, দেশ পরিচালনার ভার শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে বলেই আজ তারা বাড়ি পেয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে সারাদেশে ‘যাদের জমি আছে ঘর নেই’ এমন পরিবারগুলোকে টিনশেড ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়ও ২০০ পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় সাংগঠনিক মাতামুহুরী উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ১০০ পরিবার ও বদরখালী ইউনিয়নের ১০০ পরিবারকে এই ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে একটি করে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনও। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে এসব পরিবার পেয়েছে মাথা গোঁজার ঠাই।
সরেজমিন গত কয়েকদিন ধরে উপকারভোগী পরিবারগুলোর সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় তারা সরকারের নেওয়া এই যুগান্তকারী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, আগেকার সরকারগুলো গরিব-দুঃখী ও মেহনতী মানুষের কোনো চিন্তাই করেননি। সেখানে বর্তমান সরকার যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা পরিবারগুলোর দুঃখমোচন এবং মাথা গোঁজার ঠাই করে দিয়েছেন সেজন্য তারা শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্নোত্তরে উপকারভোগী পরিবারগুলোর জানান, এই ঘর পাওয়ার পেছনে জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে এক টাকাও উেকাচ দিতে হয়নি।
চকরিয়ার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দরবেশকাটা পূর্ব পাড়ার পঁচাত্তর বছর বয়সী জাহেদ হোছাইন। তাঁর রয়েছে তিনজন করে ছেলে ও মেয়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায় সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের মানুষ করেছেন তিনি। দিয়েছেন মেয়েদের বিয়েও। কিন্তু ছেলেরা বিয়ের পর আলাদা সংসার পাতায় জীবন সায়াহ্নেহ্ন এসে পড়েছেন বড় বিপদে।
বয়োবৃদ্ধ জাহেদ হোছাইন বলেন, ‘পৈতৃক ভিটে-বাড়ির সিংহভাগই চলে গেছে ছেলেদের দখলে। বাকি তিন কড়া (এক শতাংশ) যে জায়গাটুকুন অবশিষ্ট ছিল সেখানে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে থাকতেন কষ্টেসৃষ্টে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া টিনশেডের একটি ঘরই যেন আমাদের দিলো নতুন জীবন। বর্তমানে এই ঘরে সুখেই দিন কাটাচ্ছি আমরা।’
বৃদ্ধ জাহেদ হোছাইন ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, জীবনের শেষসময়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নতুন ঘর পেয়ে আমরা মহাখুশি। এজন্য শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
শুধু জাহেদ হোছাইনই নন, তাঁর মতো দরবেশকাটা দক্ষিণ মানিকপাড়ার প্রতিবন্ধী জসীম উদ্দিনও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়ি। জসীম উদ্দিনের স্ত্রী বোরহানা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে সুখেই চলছিল আমাদের সংসার। রয়েছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু সাত বছর আগে হঠাৎ রোগে আক্রান্ত হলে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন স্বামী জসীম উদ্দিন।
এই অবস্থায় সহায়-সম্বল যা ছিল সবকিছুই ব্যয় হয়ে গেছে স্বামীর চিকিৎসায়। এর পরও তিনি প্রতিবন্ধীই রয়ে গেছেন। ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হয়েছে আমাদের। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বাড়িই যেন আমাদের কাছে শেষসম্বল। এজন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি শেখ হাসিনার জন্য। যেন তিনি দীর্ঘজীবী হউন।’
এ ব্যাপারে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, ‘শেখ হাসিনার রাজনীতি হচ্ছে গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য। তিনি যখনই সরকার পরিচালনা করেছেন তখনই এসব মানুষ যেন সুখেই দিন কাটাতে পারেন সেই উদ্যোগই নিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমার ইউনিয়নের ১০০ পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। এ জন্য আমি মনে করি, শেখ হাসিনার সরকার বারে বারে দরকার সব মানুষের জন্য।’
উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বশর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে যেসব পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছেন তারা সকলেই একেবারে হতদরিদ্র। তাই কোনো দুষ্টচক্র যাতে ঘর দেওয়ার কথা বলে বিপন্ন এসব পরিবারের কাছ থেকে কোনো অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারেন তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে প্রথমবারের মতো উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের ২০০ পরিবার পেয়েছে টিনশেডের বাড়ি। ‘যাদের জমি আছে ঘর নেই, এমন পরিবারগুলোকে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর তৈরি করে দেওয়া হয় বাড়িগুলো।’
পাঠকের মতামত: