ঢাকা,শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় সড়ক মেরামত-নির্মাণে স্থবিরতা, দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন না কোনো ঠিকাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চকরিয়ায় সড়ক মেরামত ও নির্মাণকাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকল্পের বাজেট মূল্যায়ন সঠিক না হওয়ার অভিযোগ তুলে ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন না।

আর সমস্যার সমাধান না করে এলজিইডি দরপত্র ডেকে সময়ক্ষেপণ করছে। এই কারণে বন্যা পরবর্তী গত সাত মাসে একটি সড়কেরও নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পারেনি সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এই অবস্থায় উপজেলায় বন্যা বিধ্বস্ত সড়কগুলোর মেরামত ও নির্মাণ আগামী বর্ষার আগে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, কক্সবাজার ঘিরে সরকার যখন বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত সম্পন্নের চেষ্টা করছে; সেই সময়ে এলজিইডির এই নেতিবাচক ভূমিকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়নও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গত বছর বন্যার সড়ক মেরামতকাজ এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি এলজিইডি। বর্ষা আসতে সময় আছে কমাস; এর মধ্যে সম্পন্ন করতে না পারলে একবছর পিছিয়ে যাবে নির্মাণ ও মেরামতকাজ। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর ও দুর্ভাগ্যজনক।’

কোনো প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে এটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন জাফর আলম।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুনে চকরিয়া-পেকুয়া ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার সঙ্গে সংযোগ সড়ক এবং ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কের অনেক লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। যার বেশির ভাগই এলজিইডি অধীন। এতগুলো সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ার পরও চকরিয়ায় মাত্র ১০টি সড়ক প্রকল্প মেরামত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর গত সাত মাসেও সেই ১০টি সড়কের একটিও এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। অনেক সড়ক অনুমোদনের জন্য ফাইলবন্দি আছে, আবার অনেক সড়ক মেরামত প্রস্তাব তৈরি করাই হয়নি।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গ্রামীণ বেশির ভাগ সড়কই এলজিইডির। শীতের এই মৌসুম হচ্ছে নির্মাণ ও মেরামত কাজের মূল সময়, চলে এপ্রিল পর্যন্ত। তাহলে কাজের সময় আছে মাত্র তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ এবং কাজ শুরু কঠিন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সঙ্গে কাকারা ইউনিয়নের বন্যাবিধ্বস্ত প্রধান সড়ক (বাদশাহটেক থেকে মাঝেরফাঁড়ি পর্যন্ত) ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামতকাজ প্রথম দফায় দরপত্র ডাকা হলেও সাড়া মেলেনি। এখন দ্বিতীয় দফায় আগামী ২৮ জানুয়ারি দরপত্র ডাকা হচ্ছে। সেখানেও ঠিকাদার মেলবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আর বন্যাবিধ্বস্ত ডুলাহাজারা-মালুমঘাট আরএইচডি সড়ক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য দুদফায় দরপত্র ডাকা হলেও সাড়া মেলেনি। এখন তৃতীয়বার দরপত্র ডাকা হচ্ছে। আর চকরিয়ার মগবাজার-জেটি সড়ক মেরামতে চারবার দরপত্র ডাকা হলেও ঠিকাদার মেলেনি। এখন আবারও দরপত্র ডাকা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া ঠিকাদার সমিতির আহ্বায়ক শফিকুল কাদের চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। দর এমনভাবে নির্ণয় করা হচ্ছে যেখানে কাজ করলে কোনো লাভ হবে না। তাহলে লোকসান দিয়ে কেন আমরা পুঁজি খাটাবো?’

তিনি বলেন, ‘নিয়মেই আছে কোনো প্রকল্পে দর পাঁচ শতাংশ কম-বেশি হবে। কিন্তু পাঁচ শতাংশ বেশি হলেই অনুমোদন মেলছে না। এর আগেও অনেকগুলো কাজে আমি লোকসান দিয়েছি। এই কারণে শুধু চকরিয়া নয় কক্সবাজারেও ঠিকাদাররা এলজিইডির কাজে অংশ নিচ্ছে না।’

এমনটি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে এলজিইডি কক্সবাজার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার আলী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘‘নিয়মানুযায়ী লটারি পদ্ধতিতে দুবার ঠিকাদার পাওয়া না গেলে তৃতীয়বার ‘এনি এভাব’ হিসেবে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। প্রকল্প মূল্যায়ন সঠিক না হলে ৫ শতাংশ বেশি দর দিলে আমরা আগে বিবেচনা করিনি, এখন থেকে করব।’

চকরিয়ায় ১০টি প্রকল্পের মধ্যে কয়টি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কোনোটির নির্মাণ কাজ চলছে। আবার কোনোটি দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে।’ আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট কাজ দুই-তিন মাসের বেশি লাগবে না।’

শুধু তাই নয়, চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়ক বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার সাত মাসেও সচল করা হয়নি। এমনকি ইট-মাটি দিয়ে পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী করেনি এলজিইডি। উপজেলায় এ রকম অনেক বিধ্বস্ত সড়ক আছে যেগুলো মেরামতের প্রস্তাবই তৈরি হয়নি।

জানতে চাইলে রাজনীতিবিদ ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী আরমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করতে জেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ একাই যথেষ্ট। এটি অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকা গ্রামকে শহরে উন্নীত করার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এটা কেন ও কী কারণে করা হচ্ছে তা তদন্ত করা দরকার।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বন্যাবিধ্বস্ত অনেক সড়ক এখনও মেরামত না করার অভিযোগ উন্নয়ন সমন্বয়সভা এবং ব্যক্তিগতভাবে দপ্তরে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এখন সব চেয়ারম্যানদের ছবিসহ এসব বিধ্বস্ত সড়কের বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে বসব। এরপর উপজেলা পরিষদের রেজ্যুলেসনের মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে এসব প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নে পৃথক ডিও লেটার পাঠাব। প্রয়োজনে আমি নিজে প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাতে বর্ষার আগেই এসব সড়ক চলাচল উপযোগী হয়।’

পাঠকের মতামত: