ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের ১০২টি খুঁিট নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে বহুল প্রতিক্ষিত চকরিয়া উপজেলার বরইতলী শান্তি বাজার থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর হয়ে ইয়াংছা পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ। সড়কটির নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে চলাচলের ক্ষেত্রে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বর্তমানে সড়কটির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ এগিয়ে চলছে।

তবে শেষমুর্হুতে এসে উন্নয়নকাজে বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশজুড়ে স্থিত থাকা বিদ্যুতের ১০২টি খুঁিট। তৎমধ্যে ৯৬টি খুঁিট কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এবং ৬টি খুঁিট পিডিবির। অবশ্য বিদ্যুতের এসব খুঁিট (পিলার) অপসারণপুর্বক অন্যত্র সরিয়ে নিতে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও একবছরে সুফল মিলেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরএবি আরসি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী শান্তি বাজার থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর হয়ে ইয়াংছা পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ বর্তমানে প্রায় ৭০ ভাগ এগিয়ে চলছে।

তবে শেষ মুর্হুতে এসে উন্নয়নকাজে বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশজুড়ে স্থিত থাকা বিদ্যুতের ১০২টি খুঁিট। আমরা বিদ্যুতের এসব খুঁিট (পিলার) অপসারণপুর্বক অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের দুইটি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা সহসা খুটিসমুহ সরিয়ে নিবে বলে এমন কথাও দিয়েছে। তারপরও যথাসময়ে খুঁিট সমুহ সরিয়ে নিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে এখন উন্নয়নকাজে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

একইধরণের অভিযোগ করেছেন উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন সড়কটির বেশিরভাগ অংশ পড়েছে তাঁর ইউনিয়নে। এরমধ্যে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বিদ্যুৎ খুটিঁ স্থিত রয়েছে সড়কের চার কিলোমিটার এলাকায়।

তিনি বলেন, মানিকপুর ফরেস্ট অফিসের সামনে একটি খুঁিট একাবারে সড়ক দখলে রেখেছে। এই অবস্থার কারণে উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত নতুন পর্যটন স্পট মানিকপুর নিভৃত নির্সগ পার্কে সবধরণের যানবাহন চলাচলে খুঁিটটির কারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানিকপুর ফরেস্ট অফিসের সামনের ওই খুঁিটটি অপসারণে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চকরিয়াস্থ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: মোছাদ্দেকুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, সড়ক উন্নয়নকাজের অধীন এলাকায় আমাদের ৯৬টি খুঁিট পড়েছে। এসব খুঁিট অন্যত্র সরিয়ে নিতে সড়ক বিভাগ থেকে আমাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উত্তরে আমরা খুঁিটসমুহ সরিয়ে নিতে চারমাস আগে বিভিন্ন খরচ বাবত অর্থবরাদ্দ চেয়ে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে একটি চাহিদাপত্র দিয়েছি। কিন্তু অধ্যবদি সড়ক বিভাগ আমাদের সেই চাহিদা নিবারণ করতে পারেনি। সেইজন্য সড়ক থেকে খুঁিটসমুহ সরিয়ে নিতে বিলম্ব হচ্ছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। বরইতলী শান্তি বাজার থেকে জিদ্দাবাজার-বাদশাহর টেক-মাঝেরফাঁড়ি-সুরাজপুর-ইয়াংছা পর্যন্ত সড়কটি ১৯ কিলোমিটার সড়কটির বর্তমান প্রশস্থতা ১২ ফুট। এটিকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হবে।

সড়কে কার্পেটিং করা হবে মেশিনের মাধ্যমে দুই ইঞ্চি পুরুত্বের। এতে সর্বোচ্চ ২০ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর পাহাড়ি এলাকা দিয়ে যাওয়া সড়কের পাশে পাহাড়ধ্বস ঠেকাতে টেকসই আরসিসি দেওয়াল নির্মাণ করা হবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চকরিয়া সাইডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো.আনোয়ার হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কটির উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সড়কের মাঝখানে এবং কিছু কিছু স্থানে সড়কের পাশে স্থিত থাকা বিদ্যুতের খুঁিট (পিলার) আমাদেরকে কাজ করতে বেশ সমস্যায় ফেলছে। এই অবস্থায় উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখার নিমিত্তে খুঁিটগুলো অপসারণপুর্বক অন্যত্র সরিয়ে নিতে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু সড়কের মাঝখান থেকে বিদ্যুতের খুঁিটগুলো অপসারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোন প্রদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে ওই এলাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশে সড়কের উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তীতে খুঁিটগুলো অপসারণ করা হলে সেখানের বাকী কাজ সম্পন্ন করবো।

কঙবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ২০২০ সালের প্রথমদিকে সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। টেকসইভাবে নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তিনি বলেন, আশাকরি উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশথেকে খুঁিট সমুহ সরিয়ে নিতে পারবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরপর বাস্তবে দৃশ্যমান হবে বরইতলী শান্তি বাজার থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর হয়ে ইয়াংছা পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ।

পাঠকের মতামত: