এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া
আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৮ ইউপিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোটগ্রহণ। উপজেলার ফাসিয়াখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে এবং অন্য ছয়টি ইউনিয়নে ভোটাধিকার প্রয়োগ হবে ব্যালট পেপারে। অবশ্য ইতিমধ্যে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
বাকি ৭ ইউপির মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা (স্বতন্ত্র) সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। পাশাপাশি আরও তিন ইউপিতে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মৌখিকভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তবে এতে কেউ সাড়া দেননি। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চকরিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ৮ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দল থেকে বহিস্কার করেছেন। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে দুই ইউপিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দুই ইউপিতে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থী রয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও ৭টি ইউপিতে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
হারবাং ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ। তাঁর বিরুদ্ধে ভোট করছেন ছৈয়দ নুর। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন জামায়াত সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর।
ডুলাহাজারা ইউপিতে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কলিম উল্লাহ কলি ও যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর। ওই ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম শাহনেওয়াজ তালুকদার। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও জামায়াত নেতা গিয়াস উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চিরিংগা ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী রুমেল। স্বতন্ত্র প্রাথী হয়ে ভোটে লড়ছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এবং বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সালাহ উদ্দিন।
বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের ছোট ভাই মনজুরুল কাদের। মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মো. কফিল উদ্দিন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন বিএনপি নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মতলব।
এদিকে বরইতলী ও খুটাখালী ইউপিতে আওয়ামী লীগের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়নি। এসব ইউপিতে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের শক্ত অবস্থান রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বরইতলী ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া। এই ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জালাল আহমদ সিকদার ও জামায়াত নেতা মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান।
ফাঁসিয়াখালীতের আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন হেলালী। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বদরুছালাম চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন মো.কুতুব উদ্দিন, বিএনপি নেতা এহসানুল করিম ও শিল্পপতি শওকত ইসলাম। এছাড়া এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই নাছির উদ্দিন চৌধুরী।
খুটাখালী ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল আজাদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুর রহমান, বিএনপি নেতা ও চকরিয়া মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএম মনজুর।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ করেন, ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বাছাইয়ে ত্যাগী ও সুখ্যাতি আছে এমন প্রার্থীদের দল মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অনেক সুপরিচিত নৌকা নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যানও মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মৌখিকভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দলের সিদ্বান্ত অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকায় আমরা চকরিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৮জন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতাকে বহিস্কার করেছি।
বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর, কলিম উল্লাহ কলি, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী, হারবাং ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ নুর, হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানের ভাই জাহেদুল ইসলাম, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন, ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই নাছির উদ্দিন চৌধুরী।
জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা দলের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই ৮নকে সামরিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ বরাবর সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে।##
পাঠকের মতামত: