ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত ২০

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় মো. ফোরকান (৫৮) নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশ ভ্যান, স্বাস্থ্য বিভাগের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চকরিয়া স্টেশনের বায়তুশ শরফ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। জামায়াতে ইসলামীর দাবি, ওই ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গায়েবানা জানাজা পড়তে বিকেল ৪টার দিকে মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন লোকজন। স্থান সংকুলানের কারণে সেখানে আগেই আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই কেউ কেউ নতুন করে জানাজা পড়তে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে জানাজা পড়ে ফেরত আসছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল ও চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার স্থান ঘোষণা করা হয়। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পৌর শহরের লামার চিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজারে কয়েক হাজার মানুষ গায়েবানা জানাজার জন্য জড়ো হন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখানে গেলে তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জানাজা পণ্ড হলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে। একই সময় চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে মিছিল হয়। পৌর শহরের বাইতুশ শরফ রোডে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া জামায়াত-শিবির কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন তারা। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে ২০-৩০ জন মুখোশ পরা ব্যক্তি ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন।

সংঘর্ষের ঘটনায় ওসি ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জামায়াতের দাবি, ৬ জন গুলিবিদ্ধ ছাড়াও আরও ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, চকরিয়ায় জানাজা নিয়ে সংগঠিত ঘটনা নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গুলিবর্ষণ করা হয়নি। মূলত ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ কাজ করেছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। কে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মাথার পেছনে গুলির আঘাত লেগেছে। রক্তক্ষরণের মৃত্যু হয়। এছাড়া একজন গুলিবিদ্ধসহ ৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘ফোরকানুল রহমান আমাদের কর্মী ছিলেন। ৬ জন গুলিবিদ্ধ ছাড়াও আমাদের আরও ৫০ জন মতো নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।’ তবে ফোরকানুল কার গুলিতে মারা গেছেন তা তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি তিনি।

 

পাঠকের মতামত: