নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর উচিতারবিল মৌজায় এক নম্বর খাস খতিয়ানের প্রায় ৮ একর জায়গা দখলে নিয়ে টিলা ও নাল জমির মাটি কেটে পুকুর খননের সময় জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি উপজেলা পরিষদে পৌঁছে দেয়নি জিম্মাদার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সচিব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের উপহার হিসেবে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক নির্মাণের নির্ধারিত ছিল ওই খাস জায়গা।
গত ২৭ মে অভিযানের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি দুইজনের জিম্মায় দেন এবং আদেশমূলে তাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিলেন সোমবারের (৩১ মে) মধ্যে নিজেদের দায়িত্বে উপজেলা পরিষদে পৌঁছে দিতে। অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে রাষ্ট্র বনাম অজ্ঞাত পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে একটি মামলাও (৩৬৬/২০২১) রুজু করা হয়।
কিন্তু আদালতের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করেননি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এবং তাঁর পরিষদের সচিব নুরুল কবির।
এদিকে ফাঁসিয়াখালীর উচিতারবিল মৌজায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উদ্ধার করা এক নাম্বার খাস খতিয়ানের উচিতারবিল মৌজার বিএস ৪০৪ দাগের ৭ একর ৭০ শতাংশ জায়গাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি প্রশাসন।
এখনো সেই জায়গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনের ভেতর পরিবেশ ছাড়পত্র ও অনুমোদনবিহীন গড়ে তোলা জিএলবি নামক অবৈধ ইটভাটার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সচিবকে উদ্দেশ্য করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৩১.৪২.২২১৬.০০০.০২.০১৬.২১-৫০৩ নম্বর স্মারকের আদেশে আরো বলা হয়েছে, এক্সকাভেটরটি হারিয়ে গেলে বা কোন ক্ষতিসাধন হলে তা জিম্মাদার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পরিষদের সচিব দায়ী থাকবেন।
জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি পরবর্তীতে নিলামে তোলা হবে এবং নিলামের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হবে। এই আদেশের কপি বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজার, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), জিম্মাদার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়। সেই আদেশের একটি কপিতে স্বাক্ষর করে আদেশনামাটি গ্রহণও করেন চেয়ারম্যান এবং সচিব দুইজনই।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. নুরুল কবির চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী নিজেই দেখভাল করছেন। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।’
অবশ্য দ্বিতীয়দফায় অভিযানের পর গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি কুচক্রীমহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটিও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক নির্মাণে নির্ধারিত উচিতার বিল মৌজার এক নাম্বার খাস খতিয়ানের প্রায় ৮ একর খাস জায়গা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দখলে নেয়। এর পর সেখানে টিলা শ্রেণীর পাহাড় সাবাড় ও নাল জমির মাটি কেটে পুকুর খনন করছিলেন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়।
ওইসময় জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবকে ৩১ মে’র মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে পৌঁছে দেওয়ার নিদের্শনাও দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো (সোমবার সন্ধ্যা) পর্যন্ত সেই এক্সকাভেটর পৌঁছে দেওয়া হয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘অভিযানের সময় জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশমূলে নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া না হলে ফের অভিযান চালিয়ে জব্দ করে নিয়ে আসা হবে। একইসাথে আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের শোকজও (কারণ দর্শাও) করা হবে।’
পাঠকের মতামত: