ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় মাতামুহরী নদী থেকে বালু লুট:সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর চর থেকে বালু বিক্রী করে কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা অব্যাহত রাখায় কক্সবাজার মহাসড়ক সহ পার্শ্ববর্তি লক্ষারচর ইউনিয়ন ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তি ৫টি গ্রাম ভাংগনের কবলে পড়ে তলিয়ে যাবার হুমকীতে পড়েছে। এলাকাবাসির বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দায়িত্বরত চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়নের ২ তহসিলদার সাইফুল ইসলাম ও ইসমত আলী সহ সংশ্লিষ্টরা গত ৯ডিসেম্বর রবিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। কিন্তু পরদিন থেকে ফের বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বালু উত্তোলনের কারনে একদিকে নদীর পাড়ের বসতি ভাঙ্গন যেমন হুমকির মুখে পড়েছে তেমনি সরকার ও হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।

সরেজমিনে জানা যায়, কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী নদীর উপর জরাজির্ণ চিরিঙ্গা ব্রীজটি নির্মানের জন্য টেন্ডার হয়।-টিকাদারী প্রতিষ্টান টেন্ডার পেয়ে কাজ শুরু করার আগেই ক্ষমতাসিন দলের নাম বিক্রী করে একশ্রেণীর লোক ২টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রী কারে মোটা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একই স্থান হতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির ফলে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে কক্সবাজার মহাসড়ক সহ পার্শ্ববর্তি লক্ষারচর ইউনিয়ন ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তি ৫টি গ্রাম।

এ সংবাদ পেয়ে উল্লেখিত ২ ইউনিয়নের তহসিলদার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। দীর্ঘ ১ ঘন্টা পর আদর ও জালাল নামের ২ ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে উপস্থিত ২ তহশীলদার সহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ডেকে নিয়ে যান।অবশ্য যাবার সময় বালু উত্তোলন বন্ধ করে অফিসে দেখা করার জন্য কড়া নির্দেশ দেন।কিন্তু রহস্যজনক কারনে এখনো বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে কাকারা ইউনিয়ন তহশীলদার ইসমত আলীর সাথে মুটোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার

বিক্রি করায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীন চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১৫টি সরকারি বালু মহালে কার্যত বালু বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররা। অপরদিকে মাতামুহুরী থেকে বিক্রীর কোটি টাকা হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

ফলে মহাল ইজারা খাতে জেলা প্রশাসন অন্তত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে।

সূত্রমতে, চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা ফেরাতে পাউবোর পক্ষ থেকে ড্রেজিং প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে চকরিয়া বেতুয়াবাজার ব্রিজ পয়েন্ট থেকে উপরে-নীচের অংশ মিলিয়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজেরর কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ঠিকাদারের লোকজন ড্রেজিংয়ের নামে একই স্থান হতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির ফলে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে মাতামুহুরী নদীর বেতুয়া ব্রীজ।

উত্তোলনকৃত বালু নদী থেকে বেতুয়াবাজার-বাঘগুজারা সড়কের পাশে বিশাল জায়গায় মজুদ করে অর্ধশতাধিক ট্রাকে করে বিক্রি করছে বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। জনগন জানায়, তীর এলাকায় শক্তিশালী মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর একাধিক পয়েন্টে ভাঙ্গনেরও সৃষ্টি ছাড়াও ফাটল দেখা দিয়েছে আশপাশের মসজিদ, ব্রীজ ও ফসলি জমিতে। উত্তোলনকৃত বালু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রতিদিন ৫০-৬০টি ডাম্পার ট্রাকে করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে। ফলে বালু ভর্তি ভারী ট্রাক চলাচলের কারনে বর্তমানে বেতুয়াবাজার-বাঘগুজারা সড়ক ভেঙ্গে একাধিক খানা-খন্দেক ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনগনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীনে চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫টি বালু মহাল রয়েছে। তারমধ্যে খুটাখালী ইউনিয়নে চারটি, ডুলাহাজারা তিনটি, পাগলিরবিলে একটি, ফুলছড়িতে একটি, ফাসিয়াখালীতে দুইটি ও কোনাখালীতে একটি। প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ওই ১৫টি বালু মহাল ইজারা দিয়ে অন্তত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে থাকে। অনুরূপভাবে চলতি বছর ও এসব বালু মহাল নতুনভাবে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চকরিয়ার একাধিক বালু মহালের ইজারদার অভিযোগ করেছেন, সরকারি টাকায় মাতামুহুরী নদীর ড্রেজিং করার বিষয়টি একটি ভাল উদ্যোগ। তবে উত্তোলনকৃত বালু বাহিরে বিক্রি করার জন্য কার্যাদেশে কোন ধরণের নির্দেশনা না থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা অমান্য করে চলছে। ভুক্তভোগী বালু মহাল ইজারদাররা দাবি করেছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বালু বাণিজ্যের কারনে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে এবছর জেলা প্রশাসন কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনে তাঁরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বালু বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাবিবুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় মাতামুহুরী নদীর তিন কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করতে প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কার্যাদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে গতমাস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। তিনি বলেন, কার্যাদেশে উত্তোলনকৃত বালু অন্যত্র বিক্রি করার কোন নির্দেশনা নাই।

কিছু কিছু বালু বাইরে বিক্রিও করা হচ্ছে দাবী করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সয়লাভ হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনের পর বাইরে বিক্রি করতে কার্যাদেশে কোন ধরণের নির্দেশনা নেই সত্য। তবে উত্তোলনকৃত বালু গুলো যাতে ফের নদীতে নেমে না যায়, সেইজন্য কোন উপায় নেই দেখে আমরা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, কার্যাদেশ লঙ্ঘন করে উত্তোলনকৃত বালু বাইরে বিক্রি করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ দিকে একটি সুত্র জানায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রী করে গত ১৯ অক্টোবর শুক্রবার ২৬ লক্ষ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন। সচেতন মহলের অভিযোগ উত্তোলিত বালু সরকার নিলামে বিক্রী করলে এই টাকা রাজস্বখাতে যেত।

পাঠকের মতামত: